Tuesday, August 6, 2013

পাগলের গল্প

আজ বাড়ি ফেরবার পথে একজন পাগলের সাথে দেখা হলো -
না আমায় সে মোটেও পাত্তাতাত্তা দেয়নি - আমিই তাকে দেখছিলাম ...
বাস ধরবো বলে চিত্পুর রোডের রাস্তায় দাড়িয়ে আছি দেখি কোত্থেকে হঠাত করে এই পাগল বাবাজি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আমার কাছে  চলে এলো -
মুখে এমন এক্সপ্রেশান যেন প্রচন্ড ব্যস্ত ঠিক হেড অফিসের বড়বাবু 
আলগা গায়ে লুঙ্গি পরা, কাঁধে আবার একটা মেয়েদের লম্বা ঝোলা ব্যাগ নিয়েছে -
কোত্থেকে জোগার করেছে কে জানে? সেই ব্যাগের ভিতরে আবার যত রাজ্যের গাছের ডালপালা পাতা ভর্তি করে রাখা আছে ...
গায়ের রং ফর্সাই তবে বহুদিন চান করেনি, তাই মাটি জমে জমে সেই রং এখন শ্যামবর্ণ -
গালভরা ধুসর দাড়িগোঁফ নিয়ে তামাটে মুখখানা বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পুড়ে একদম প্রাগৈতিহাসিক হয়ে গেছে
সে যাই হোক লোকটি আমার সামনের একটা লাইট পোস্টের সামনে এসে দাড়ালো,
মুখে একরাশ বিরক্তির ছাপ
তারপর হাত দুটোকে মাথার উপর জড়ো করে নমস্কার করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কিসব " আং  মাং ঝাং " বকতে লাগলো - তারপর হাততালি দিলো
এরপর আমার ঠিক পাশে একটা মৌসুম্বী লেবুর সরবতের দোকান ছিল,
সেখানে এসে দাড়িয়ে হাতের কেড়ো আঙ্গুল দিয়ে দুটো মৌসুম্বী লেবুকে ঘষতে লাগলো আর আবার সেই বিড়বিড় করে কিসব " আং  মাং ঝাং "   বকতে লাগলো

তারপর সেকি হাসি? আমি তো সব অবাক হয়ে দেখছি 
তারপর পাগলটা হটাত বেশ গর্বিত গর্বিত মুখ করে লেবু দুটোকে নমস্কার করে হনহন করে কোথায় যেন চলে গেলো
রাস্তাঘাটে কোনো আজব লোক দেখলে অথবা তার সাথে পরিচয় হলে আমি তার কথা খাতায় লিখে রাখি
তাই আজও এই পাগলটার কথা লিখে রাখলাম
তাছাড়া পাগল দের নিয়ে আমার খুব ছোটবেলা থেকেই কেমন একটা আকর্ষণ,
ওরা কোথায় থাকে?
ওদের নাম কি?
ওদের কেই বা খেতে দেয়?
যাদের বাড়ির পাগল তারা কি কখনো ওদের খোজ নেয় না?
এইসব আর কি ...
পাগল দেখলেই মনে পড়ে যায় সেই ছোটবেলার রহস্য গল্পের লেখা গুলো,
মনে হয় পাগল মানেই " সিবিআই অফিসার "
কি জানি আজকের এই পাগলটাও হয়ত কোনো সিবিআই অফিসার, এই ঘটনাটাই হয়ত তার কোনো " প্লান "
মাঝে মাঝেই মনে হয় এইসব পাগলদের পিছু পিছু গিয়ে সব জেনে ফেলি, কিন্তু বাস্তবিকতার জন্য তা আর হয়ে ওঠে না, আজও এই পাগলকে জানা হলো না
তাই মনে মনে একটা প্রশ্ন খচখচ থেকেই গ্যালো ...
এর আগেও আমি অনেক পাগল দেখেছি
একজন কে দেখতাম সে শুধু রাস্তায় সারাদিন ছাতা মাথায় দাড়িয়ে থাকতো, নড়তনা চড়তনা কথা বলত না শুধু ছাতা মাথায় দাড়িয়ে থাকত , উনি ছিলেন ছাতা পাগল ...

আবার ছোটবেলায় আমার বাড়ির পাশে এক পাগল থাকতো, সে শুধু সারাদিন পাচিলের উপর বসে মুখ দিয়ে " জাম জাম জাম জাম জাম " শব্দ করতো -
সত্যি কতোই না পাগল আছে এই পৃথিবীতে
আমার তো মাঝে মাঝেই মনে হয় আমি নিজে যদি পাগল হতে পারতাম তালে খুব কাছ থেকে পাগলের জীবনযাত্রাটা উপলব্ধি করতে পারতাম
কিন্তু ওরকম দুম করে বললেই তো আর পাগল  হওয়া যায় না?
তাই কি আর করা মনের ভিতর সেই খচখচ প্রশ্নটাকে রেখেই বাড়ি ফিরে এলাম, আর রাস্তার সেই নামগোত্রহীন অদ্ভুত পাগল থেকে গেলো আমার রাফ খাতার পাতায় …

রথযাত্রা লোকারণ্য, মহা ধূমধাম

রাত পোহালেই রথ
আর সেই সুত্র ধরে একটা দীর্ঘ জীবনের পর বিকেলের নিভে যাওয়া আলোর পথ ধরে আমি বাড়ি ফিরছি ।
সেই চেনা শহর, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মানুষের ভিড়, দ্রুত পথচলা, বাস, ট্রাম, ট্যাক্সির রোজকার শব্দ, আর লাল-সবুজ ট্রাফিক সিগন্যালের আলো । একটা ধুলোমাখা ক্যানভাসের মতো এই ছবিগুলোকে কাঠের চৌকোনো ফ্রেমে সাজিয়ে বাসের জানলা দিয়ে শহর দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরতে আমার বেশ লাগে ।
“ আমি দেখতে ভালবাসি “ ।
বর্ষার এই মরশুমটায় রিমঝিম রুমঝুমেরা মাঝে মাঝেই নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে যাচ্ছে, তাই শেষ বিকেলের এক পশলা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট সব ভিজে আছে, দু-ধারের ফুটপাথে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছে । আর কখন জানি এসবের মধ্যে একটুখানি জায়গা ভাগ করে নিয়েছে লাল হলুদ সবুজ কাঠের তৈরী একতলা - দোতলা - তিনতলা রথগাড়িগুলো ও মাটির খুদে খুদে ছোট্ট তিন ভাই বোনের দল মানে আমাদের প্রানের ঠাকুর জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা । এ যেন উত্সবের শহর …

ছোটবেলায় শুনেছিলাম রথ উত্সবে নাকি জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা তাদের মাসীর বাড়ি ঘুরতে যায়, তবে একটু বড় হতে মানে এই ক্লাস সেভেন এইটে উঠে বুঝলাম  রথ উত্সব মানে বাংলায় ভাবসম্প্রসারণ । ওই যে বাংলা পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতো না -

‘‘ রথযাত্রা লোকারণ্য, মহা ধূমধাম
ভক্তেরা লুটায়ে পথে, করিছে প্রণাম
পথ ভাবে ‘আমি দেব’, রথ ভাবে ‘আমি’
মূর্তি ভাবে ‘আমি দেব’, হাসে অন্তর্যামী ’’

কি কঠিন ছিলো, আমি কোনদিন লিখতে পারিনি ...
যাইহোক ছোটোবেলায় আমার ঐরকম একটা তিনতলা কাঠের রথ ছিল আর সেটা বাপ্পার টিনের রেলগাড়িটার মত পাই পাই করে ছুটতো । রথের ঠিক আগের দিন দুপুর বেলা এবং পরের দিন সকালেও দাদা রঙিন কাগজ কেটে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিত রথের গায়ে, তারপর হাতে তৈরী রঙিন কাগজের ফুল, মালা আর রং বেরঙের পাতাবাহারি গাছের পাতা দিয়ে আমার রথটা কি সুন্দর সেজে উঠতো । বিকেল হলেই সেই রথ নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম পাড়ার রাস্তায়, বড় পুকুর টার চারপাশে একপাক ঘুরে দাদার হাত ধরে এসে দাড়াতাম বড় রাস্তার মোড়ে । সন্ধ্যের আলোয় সেখানে নেমে আসতো রথের মেলা ।

আবার কৈশোরে রথ উত্সব বলতে বুঝলাম রাধারানীর প্রেম,
মানে সেই বঙ্কিমচন্দ্রের রাধারানী - চির অভাগী রাধারানীর গল্প  -
যে পীড়িত মায়ের পথ্যের জন্য বনফুল দিয়ে মালা গেঁথে বৃষ্টি ভেজা রথের মেলায় বেচতে এসে রুক্মিণীকুমার রায়ের প্রেমে পড়ে - সেই গল্প ।

এখন রথের দিন ছুটি থাকলে ভাইপো টার জন্য রথ সাজিয়ে দিই, ঠিক আমার ছোটবেলার মতো করে । দুপুরে ঘুমিয়ে কাটাই, সন্ধ্যে হলে পাড়ার দোকান থেকে পিঁয়াজি, আলুর চপ আর গোটা গোটা পাপড়ভাজা কিনে এনে সবাই মিলে  হই হই করে ভাগ করে খাই । পাপড়ভাজা রোজ ঘরে হলেও বাইরের পাপড়ভাজার একটা আলাদা স্বাধ গন্ধ থাকে যেটা অসাধারণ । বিশেষত এই রথের দিন পাপড়ভাজা খাওয়া অনেকটা বিজয়ার কোলাকুলির মতো অনন্য । আসলে আমাদের মতো হুজুগে বাঙালিরাই জানে উত্সবের রূপ-রস-গন্ধ টা ঠিক কি?


রথ উত্সবের আরেকটা  বৈচিত্র হলো এই দিনেই বনেদী বাড়িগুলোতে দুর্গাপুজোর সূচনা ঘটে, মা দুর্গার কাঠামো পুজো হয় । এই দিন থেকেই হয়ত বাঙালি দুরু দুরু বুকে রোজ রাতে শুতে যাবার সময় ক্যালেন্ডারে দিন গোনা শুরু করে । অফিস ফিরতি পথে কুমোরটুলি পাড়ার সেই স্যাতসেতে ভেজা এঁদো গলিটায় আমার যাতায়াত বাড়তে থাকে ।
সেই ছোট্টবেলা থেকেই ঠাকুর গড়া দেখতে আমার বড্ড ভালো লাগে । আমার মতো আশায় বাঁচে যে সব চাষা  তাদের কাছে পুজোর থেকেও পুজোর এই অপেক্ষা অনেক বেশী  আনন্দের, অনেক বেশী প্রিয় । তাই আগামীকাল রথের দড়িতে টান পড়ুক, উত্সবের সুচনা হোক । চারপাশ আনন্দে মেতে উঠুক আর আমার মন জুড়ে থাকুক একরাশ খুশীর অপেক্ষা .........

রাত্রি ঘন হলে

-- তারপর রাত্রি ঘন হলে

চাঁদের যদি আলো গোনা যায়

আমি তখন ঘর বাড়ি সব ছেড়ে

পথে নামি

ভোরের ঠিকানায় --

ভোর

জাগছে শহর ভোরের আলোয়,

ঘুমিয়ে গেছে রাতি -

নিভছে যত রাত্রিজাগা,

লক্ষ তারার বাতি - 

একটা মশাল আগুন জ্বালায়,

ওই যে পূবের কোনে -

শহরটাকে রাঙিয়ে তোলে,

নিজেই আপন মনে :)

নিভিয়ে রাখো মোমবাতি

ঘন ঘন ডাকছো কেন?

আমি যে মরে গেছি -

নিঃশব্দে থাকতে দাও,

নিভিয়ে রাখো মোমবাতি

আমি অতি সাধারণ

আমি মাখি মাটি

মাটি চাপা জীবন, শুধু 

মাটির উপর খাটি ...

দ্য স্টোরি অফ লায়ন / লাইফ - এনিম্যাল প্লানেট

এইমাত্তর একটা খুব সুন্দর প্রোগ্রাম দেখলাম টিভিতে -
( দ্য স্টোরি অফ লায়ন  / লাইফ - এনিম্যাল প্লানেট )
আফ্রিকার মাসাইমারার জঙ্গলে এক গ্রীষ্মের শুরুতে একটা ছোট্ট সিংহ জন্মালো,
মা সিংহের দুধ খেয়ে, কচি কচি হরিনের মাংশ খেয়ে সে আসতে আসতে বড় হতে লাগলো, একটু বড় হতেই মায়ের লেজ বাবার কেশর কামড়ে, টেনে তার সে কি খেলা ...
এইভাবে দিন চলছিল বেশ !!
তারপর সিংহটি কিশোর হতেই পুরো পরিবারটা কেমন যেন পাল্টে গেলো !!
দলের রাজা মানে বাবা সিংহ তাকে ভয় দেখিয়ে, মেরে দল থেকে, বাসস্থান থেকে বহু দুরে তাড়িয়ে দিলো -
এরপর সিংহটা প্রায় একা একাই কিছু ছোট শিকার ধরে খেয়ে একবছর বেঁচে রইলো,
এবং আরো তেজি ও হিংস্র পুরুষ সিংহ হয়ে উঠলো আর খুব সহজেই জঙ্গলের এক অন্য বৃদ্ধ সিংহকে লড়াই তে হারিয়ে তার রাজ্যপাট, তার সিংহী দের কব্জা করলো -
কিছুদিনের মধ্যে শুরু হলো নতুন ঘর সংসার, একদিন কোনো দল থেকে বিতারিত সিংহটাই এখন নতুন একটা দলের রাজা ও সর্বময় কর্তা হযে সুখে দিন কাটাতে লাগলো -
এইভাবে তার অধীনে আফ্রিকার মাসাইমারার জঙ্গলে একের পর এক গ্রীষ্ম কাটে, বর্ষা নামে, বসন্ত আসে ...
আসতে আসতে সেই সিংহও বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে পরে -
হঠাত একদিন অন্য একটি যুবক, তেজি ও হিংস্র পুরুষ সিংহ এসে তাকে লড়াইতে হারিয়ে দল থেকে তাড়িয়ে দেয় -
এরপর সে আবার একা হয়ে পরে, বৃদ্ধ ও দুর্বল তাই কোনদিন শিকার ধরতে পারে তো খাবার জোটে তো কোনদিন খেতেই পায় না - আসতে আসতে সে আরো রুগ্ন ও দুর্বল হয়ে পরে, ভালো চোখে দেখতে পারে না ...
আর একদিন ঠিক বসন্তের শেষ দিকে সে জঙ্গলের অনেক দুরের একটা ফাঁকা গুহায় এসে আশ্রয় নেয় -
কিছুদিন পর দেখা গেল গুহার মুখে অসংখ্য শকুন আর গুহার ভিতরে সেই মৃত সিংহের দেহবশেষ ...
আফ্রিকার মাসাইমারার জঙ্গলে তখন শুরু হতে চলেছে নতুন এক গ্রীষ্ম ...

Tuesday, June 25, 2013

রোদ গিয়েছে ছুটি ...



জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি 
রোদ গিয়েছে ছুটি 
ঝাপসা রঙের আকাশ 
এখন তারায় মিটিমিটি 
ছাদের মাথায় অভিমানী 
হিংসুটি এক চাঁদ 
ওপাড়েতে ভাঙ্গলো বুঝি?
নবীন আলোর বাঁধ 
কুয়াশা রঙের সন্ধ্যেবেলায় 
রাত নামছে গুটিগুটি 
জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি 
রোদ গিয়েছে ছুটি ...

যেন রুপকথা গড়ি



আঁধখানা চাঁদ হাসে  
জংধরা আলো,  
মেঘেদের গা ঘেষে  
রাত নামে কালো,  
ঘুম ঘুম ঘরে-  
ভাসে স্বপ্নের তরী,  
আগামীর ভোরে  
যেন রুপকথা গড়ি ...

কথাগুলো ...


অফিস থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরছি অন্য বাসযাত্রী দের মুখে একই কথা আজকে শহরের নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের মিছিল - কেউ বলছে এই প্রতিবাদ দরকার ছিল, কেউ বলছে কিছু হবে না দাদা এবং তর্ক চলছে ...
আমিও এই সমাজের অংশ তাই আমার কিছু কথা আছে কিন্তু কোথায় বলি? আমি দাদা কাকাদের মতো চায়ের দোকানে আড্ডা মারি না আবার মা মাসি দের মতো পুকুর পাড়ে বাসন মাজতেও যাই না তাই খুব ভয়ে ভয়ে এখানেই মনের কথা গুলো শেয়ার করছি -
প্রথমেই বলে রাখি মৃনাল সেনের মতো আমিও শারীরিক ভাবে দুর্বল তাই আমি কোনদিন কোনো প্রতিবাদে ওতো মানুষের ভিড়ে পথ হাটি নি, লোডসেডিং এর অন্ধকার ঘর ছাড়া কোথাও কখনও মোমবাতি জ্বালাইনি, তা বলে কি আমি প্রতিবাদী নই?

আজকের এই মিছিল কিংবা নন্দীগ্রাম হত্যার পর মিছিল দুটোতেই আমার প্রতিবাদ ছিল ও আছে । কিন্তু প্রতিবাদ হওয়া উচিত মানবিক নইলে সেই ভোতা লোক দেখানো প্রতিবাদে কারোর কিছু ছেড়া যাবে না - দিল্লি ধর্ষণের পর ওখানে যে প্রতিবাদ দেখেছিলাম সেটা আমার কাছে অনেক বেশি মানবিক মনে হয়েছিল, শীতের রাতের ওই কনকনে ঠান্ডায় জলকামানের সামনে কোনো রাজনৈতিক রং ছাড়াই তারা বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে ছিল । টিভিতে দেখলাম আজকের এই মিছিলে অনেকেই শুধু ক্যামেরার সামনে মুখ দেখানোর জন্য ছটপট করছে, আমার কাছে এরা মানুষ নয় এরা শুধু রং, এমন কি দিল্লি ধর্ষণের পর কলকাতায় যখন মোমবাতি মিছিল বেরিয়েছিল সেইদিন এই ফেসবুকেই দেখেছিলাম একটা মেয়ে একহাতে মোমবাতি আর একহাতে আইসক্রিম নিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে গা জড়িয়ে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে ফটো আপলোড করেছেন - এরকম প্রতিবাদের কোনো দাঁত নোখ থাকে না - এইরকম প্রতিবাদ বড্ড দুক্ষ দেয় ...

তবে হাজার হাজার মানুষ মনের তাগিদেও আজকের প্রতিবাদে এসেছেন তারা অসম্ভব ভালো মানুষ আমার কাছে :)

আর একটা কথা বলবো - বিছানায় স্বামী স্ত্রীর যৌনতা, পর্ণগ্রাফি আর ধর্ষণ কখনও এক জিনিস নয়, চলে যাওয়া ঋতুপর্ণ ঘোষই প্রথম আমাদের দেখিয়েছিল তার " দহন " সিনেমায় কিভাবে চার কামরার বিছানায় একজন স্বামী তার বউ কে ধর্ষণ করে, তাই পর্ণগ্রাফির সাথে যুক্ত থাকলেই সে ধর্ষকের মতো ঘৃণ্য নয়, তাই সানি লিওন কে আমি সন্মান করি, সে আর যাই হোক ধর্ষক / খুনী নয় - বুক ফুলিয়ে তার জীবিকার সার্থে তার শরীরের কিছু অংশ মানুষের কাছে তুলে ধরছে, আমার কাছে  সানি লিওনের সাথে একজন ফুল বেচনেবালি অথবা একজন ধুপকাঠি বেচনেবালার কোনো তফাৎ নেই -

তাই ধর্ষক শুধু ধর্ষকই, তারা নাবালক, সাবালক, বিত্তশালী, গরিব, বিশিষ্টজন অথবা ছোটলোক হয় না তারা শুধুই ধর্ষক, আমি এ দেশের বিচারক হলে ওদেরকে ফাঁসিই দিতাম । তবে যে দেশে ধর্ষক নাবালক বলে জামিন পায় আর শ্রীসন্তের মতো  চোর বাড়ি ফিরে বীরের সন্মান পায় সে দেশে কিছু বলতেও অবাক লাগে - তবু রাগ / দুঃক্ষ হয় আর সেই থেকেই এই লেখা । রাগ / দুঃক্ষ অনেকটা নিমপাতার মতো চিনি মিশিয়ে খেলেও তিতেই লাগে তাই এরকম বাজে ভাষায় মনের কথা গুলো বললাম, এখানে আমার আপনজন, পরিবারের লোকজন, অনেক গুরুজনরাও আছেন এইসব কথা শুনতে খারাপ লাগলেও রাগের সময় তো আর কাব্যি করতে পারি না -

" ভালোবাসা "


" ভালোবাসা "

অনেকটা ঘড়ির কাটার মতো -

যখন যে সম্পর্কের উপর এসে থামে,

- তার " সময়ের গুরুত্ব " বাড়ে

কাটা ঘুরলেই ভালোবাসা সম্পর্ক কে ছাড়ে ...

একশ বাহান্নটা তারা ঢাকা পড়ল মেঘের আড়ালে :)


জলছবি চাঁদ পশ্চিম ঢালে গড়ালে

একশ বাহান্নটা তারা ঢাকা পড়ল মেঘের আড়ালে

বোবা ছেলেটার মুখে হাসি -

চোখে লেগে ঘুমের কাজল

আদুরে বকুলফুল জাগে বিছানার চাদরে -

ওগো মেহগনি মেয়ে

এ বুকে, তুমি যেই হাত বাড়ালে?

একশ বাহান্নটা তারা ঢাকা পড়ল মেঘের আড়ালে ...

" দো বিঘা জমিন "


বিকেল শেষ, নিভে আশা আলোয় ধুসর শহরতা একটু একটু করে গোলাপী হয়ে উঠছে !
সন্ধ্যার শহরে কেউ কেউ বাড়ি ফিরছে আবার কেউ ফুটপাথে পসরা সাজিয়ে বসছে, শুরু হচ্ছে দেনা পাওনা !
ছুটির রাস্তায় পায়ে পায়ে ব্যস্ততা, বাস, ট্যাক্সি, অটো-রিক্সার ইদুর দৌড়ে শহরের ফুটিফাটা নগন্য অংশ গুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে, আসলে আমরা বড় কিছু পাবার আশায় সবসময় জীবনের ছোট্ট নগন্য জিনিসগুলোকে, সময়টাকে অবহেলা করি, এগিয়ে যাবার দৌড়ে হারিয়ে ফেলি পায়ের নীচের ছোট্ট জমিটাকে । কিন্তু যাদের জীবনে এই ছোট্ট সময়টা, এই ছোট্ট জমিটুকু বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন একমাত্র তারাই সেটা সযত্নে আগলে রাখে " দো বিঘা জমিন " এর মতন ...

... অফিস ফেরতা বাড়ি ফেরার মুখে বড়ো রাস্তার ক্লাবটার সামনে একটু দাড়িয়ে আছি, দেখি রাস্তার উল্টোদিকের ফুটপাথে এক কাঁচাপাকা চুলের শীর্ণকায় ভদ্রলোক, পরনে কালো প্যান্ট আর স্যান্ড গেঞ্জি | একটা বন্ধ পান বিড়ির দোকানের সামনের দু'হাত চওড়া জমিতে খুব যত্ন করে জল ছিটিয়ে ঝাঁট দিছে । আমার তেমন কোনো কাজ নেই তাই আমিও বেশ কিছুক্ষণ ওখানে দাড়িয়ে রইলাম, দেখি লোকটি তারপর একটা নীল প্লাস্টিক ভাজ করে মাটিতে পেতে তার উপর ব্যাগ থেকে এক এক করে নানান ধরনের শুখনো গাছের ডাল, পাতা, শুখনো ছোটো ফল, মাদুলি, সুতো আরও কতো কি সেই প্লাস্টিকটার উপর সাজিয়ে রাখছে, এরপর সামনের মাটিতে জলের ছিটে দিয়ে দুটো ধুপকাঠি ধরিয়ে পুঁতে দিলো আর পাশে একটা ছোটো প্লাস্টিকের বালটিতে জল নিয়ে ও নিজের ব্যাগটাকে গুছিয়ে নিয়ে বসে পড়ল পসার সাজিয়ে ।
ততক্ষণে দিনের আলো ছুটি নিয়েছে, শুধু স্ট্রীট লাইটের জংধরা আলো এসে পড়েছে লোকটির বিবর্ণ মুখে আর সেই আলোয় ভিজে সে আগলে রাখছে তার খুব সাধের " দো বিঘা জমিন " টাকে, তার ও তার পরিবারের পেট ভরে খেয়েপরে বেঁচে থাকার হয়ত এটাই একমাত্র অবলম্বন ।

বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম, সেই শীর্ণকায় মানুষটির জ্বালানো কমদামী ধুপের গন্ধ বাতাসে না ভাসলেও স্ট্রীট লাইটের জংধরা আলোর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারিপাশে । বুঝতে পারছি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আলোর যেমন আলাদা আলাদা গন্ধ থাকে তেমনি প্রত্যেক মানুষের জীবনের একটা গন্ধ আছে, একটা ইতিহাস আছে ...

আলাদা আলাদা

অপারেশন কিংফিশার


আজ অফিস যাবার আগে একটা ছোট্ট বাচ্চা মাছরাঙ্গা পাখিকে বাঁচিয়েছি :)
সকাল ৭টা - আমি দাঁত মাজছিলাম হঠাৎ দেখি বাড়ির সামনের রাস্তায় কাকেদের চিত্কার চেচামেচি,
এগিয়ে গিয়ে দেখি রাস্তার নর্দমায় সেই বাচ্চা মাছরাঙ্গাটা কাঁদায় জলে মাখামাখি হয়ে লুটোপুটি খাচ্ছে ...
এদিকে তাকে দিয়ে সকালের বেরেকফার্স্ট সারবে বলে পাড়ার লালু বুলু কাক থেকে শুরু করে হুলো মেনি বিড়াল সব্বাই এসে হাজির হয়েছে নর্দমার চারিপাশে !!

সকাল ৭টা ১৫ - শুরু হলো আমার " অপারেশন কিংফিশার "

আলগা গায়ে গামছা পড়ে হনুমানের সীতা উদ্ধারের মতো নর্দমা থেকে সেই বাচ্চা মাছরাঙ্গাটিকে উদ্ধার করে আমাদের বাড়ির বারান্দায় রাখলাম,
তারপর ওকে করিনায়ালা ভিভেল শ্যাম্পু মাখিয়ে জল ঢেলে স্নান করিয়ে বিছানায় চিৎ করিয়ে শুয়িয়ে ফ্যানের হাওয়ায় একটু শুকিয়ে কুড়মুড়ে করে নেওয়া হলো -

সকাল ৮টায় আমি যখন অফিস যাই আমার দিকে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে ছিল -
পরে অফিস থেকে ফোনে জানতে পারি মা ওকে মুড়ি খেতে দিয়েছিল কিন্তু রাজপুত্তুরের তা পছন্দ হয়নি
দুপুরের দিকে নাকি আমাদের ছাদ থেকে ফড়ফড়ানি ফড়িং এর মতো ডানা মেলে উড়ে গেছেন ...

আশাকরি মাছরাঙ্গাটি বড় হয়ে সুখে মাছভাত খাক আর বিশ্ব ভ্রমন করুক, ও খুব ভালো থাকুক :)








** শুধু অফিসের তাড়া ছিলো আর মনেও ছিল না তাই মোবাইলে ওর ছবি তুলতে পারিনি বলে মনটা বড্ড খুতখুত করছে !!

বৃত্ত ও সীমাবদ্ধতা -

সহজ করে কিছু আঁকতে গেলে প্রথমে একটা বৃত্ত এঁকে ফেলো -
ফাঁকা, নিঃসঙ্গ বৃত্তের মাঝখানে তুমি,
একান্তই তুমি, নিজের তুমি -

এবং তুমি,

বৃত্তের চারপাশে ছড়িয়ে থাক তোমার প্রিয়জনেরা,
কিছুটা রঙিন, কিছুটা সাদাকালো
কিছু থাক কুয়াশাঢাকা,
কিছু মুখ জমকালো -

এবার একটা একটা করে তোমার, তোমার খুব কাছের প্রিয় মুখগুলোকে বৃত্তের মধ্যে হাজির করো -
সহজ করে এঁকে ফেলো তাদের জীবনকে,
যেমন করে এঁকেছিলে নিজেকে  ...
দেখবে বৃত্তটা ভরে উঠছে - ভিড় জমছে,
মুখের ভিড়, রঙের ভিড়
ছায়ার ভিড় -

আলো-ছায়ায় ঘেরা তবু কিছু মুখ, কিছু প্রিয়জন বৃত্তের বাইরে পড়ে থাকে অগোছালো -
এইভাবে আঁকতে আঁকতে বুঝতে শিখবে বৃত্তের সীমাবদ্ধতা,
ছবির সীমাবদ্ধতা, জীবনের সীমাবদ্ধতা -
প্রিয়জনদের জীবনের বৃত্তে আটকে রাখার সীমাবদ্ধতা ...

আমার মা :)



আজ মাদার'স ডে -
আমি আমার মা কে নিয়ে ঠিক কি বলি?
আমি মা কে কোনদিন গলা জড়িয়ে আদর করিনি, ওসব আমার আসে না -
আর সত্যি বলতে কি আমার মা ওসব বোঝেও না -
সেই কোন ছোটবেলায় দেখতাম ভোরবেলায় মা নিমপাতা ঝরে পড়া উঠোন ঝাট দিতো , বারোয়ারী কল থেকে জল ভরে আনতো, বাসন মাজতো, আজ বুঝি মা রা কত ভালো হয়, আর আমি মায়ের পিছন পিছন ঘুরতাম, মায়ের শাড়ির আঁচলের একটা অংশ মুখে নিয়ে চিবতাম । দুপুরবেলায় মা যখন শুয়ে থাকত আর পান খেত মুখের ভিতর থেকে চিবোনো পানের একটু আমার মুখে পুরে দিতো,
আমি খুব যত্ন করে খেতাম ...
মায়ের বুকে মাথা গুঁজে আমি গায়ের গন্ধ নিতাম,

"তেজপাতা গন্ধ"

আসলে আমার কাছে মা একটা ঘন সবুজ পুকুরের মতো ।
আশ্চর্যজনক ভাবে আমার মনে হয় পৃথিবীর প্রত্যেক মায়ের দেহে-শরীরে একটা আলাদা গন্ধ আছে,
হাজার হাজার সুগন্ধি ডিওড্রেন্ডের থেকেও হাজার হাজার গুন বেশি সুগন্ধি সেই গন্ধ,
আর একমাত্র সন্তানেরাই সেই আলাদা গন্ধ চিনে নিতে পারে আর এখানেই মায়ের বৈচিত্র -

আজও দেখি এই বয়সেও মা আমাদের জন্য কত পরিশ্রম করে তবু তার মুখের হাসি ফুরায় না, ক্লান্ত হয় না -
আমার মা খুব বেশি পড়াশোনা জানে না তবু সে আমার কাছে শিক্ষিত তার মাতৃত্বে,
এখনো দেখি আমরা বাড়ি ফিরতে দেরী করলে, ফোন না করলে ছটফট করে,
নিজে ফোন করতে ভালো পারে না তাই অন্য কে দিয়ে ফোন করিয়ে কথা বলে -
এখনও রবিবার দুপুর বেলায় চিত্কার করে বলে " কিরে তাড়াতাড়ি স্নান করে খেয়ে আমায় উদ্ধার কর - অনেক কাজ পরে আছে আর জ্বালাস না "

একবার ২ বছর আগে এরকমই এক
মাদার'স ডে তে আমি আর ভাইঝি মিলে সেলিব্রেশন করব বলে মাকে একটা আইসক্রীম এনে দিলাম ( মা আইসক্রীম খেতে ভালবাসে) আর মাকে উইস করলাম মা, " হ্যাপ্পি মাদার'স ডে " -
মা কিছু না বুঝে অবাক হয়ে বলল সেটা কি? আমি বললাম আজ মায়ের দিন মাকে ভালবাসতে হয় -
মা বললো - " থাক আর আদিখ্যেতা করতে হবে না " এই বলে আইসক্রীমটা একটু একটু করে আমি, ভাইঝি, ভাইপোদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে নিজে একটুখানি খেলো আর আমাদের মাথায়-গালে হাত বুলিয়ে দিলো ...

এটাই আমার মা, মা কে কোনদিন গ্রিটিংস কার্ড
দিয়ে জানাতে হয়নি মা আমি তোমায় কত ভালবাসি - মা ও সে কথা বলেনি  - আসলে মা দের ভালবাসা যাচাই করতে হয়না, বলতেও হয়না -

কিছু ভালবাসা গাছভরা বকুলফুলের মত হাওয়ায় 
হাওয়ায় ঝরে পড়ে ...

এ কবিতার কোনো নাম নাই - ঘুমের মধ্যি লেখা কিনা ...


আঁধখানা চাঁদ হাসে
জংধরা আলো,
মেঘেদের গা ঘেষে
রাত নামে কালো,
ঘুম ঘুম ঘরে-
ভাসে, স্বপ্নের তরী
আগামীর ভোরে
যেন রুপকথা গড়ি ...

গরমকালে বাচ্চাদের ন্যাড়া করবেন না প্লিজ

রোজ সকালে আপিসের বাস ধরবার জন্যি যখন রাস্তায় দাড়িয়ে থাকি ঠিক তখন একটা স্কুল বাস ( নিবেদিতা স্কুল মনে হয় ) নিয়ম করে দুটো ফুটফুটে মেয়েকে আমার পাশ থেকে তুলে নিয়ে যায়, ওরা ওদের মা / কখনো কখনো বাবার হাত ধরে এত্তো বড়ো একটা বস্তা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে টালুস টুলুস করে তাকায় ( মনে হয় হতভম্ব হয়ে ভাবে এটা আবার কোন জীবজন্তু )
যাইহোক আজ সকালে দেখলাম ওদের একজন ন্যাড়া মুন্ডি ( মাথার সেই লাল ফিতে বাঁধা ঝুঁটিটা আর নেই ) খুব রাগ হলো ওদের বাবা মায়ের উপর, বাবা মা গুলোর কি " কমন সেন্স " বলেও কিচ্ছুটি নাই? বিজ্ঞান বলে এই তীব্র গরমে শিশু / বাচ্চাদের মাথা ন্যাড়া করতে নেই, এতে ওদের চুলহীন টাকে রোদ ও গরমে কষ্ট বাড়ে । প্লিজ চুল ছোট করে কেটে দিন কিন্তু এই গরমে বাচ্চাদের মাথা একদম ন্যাড়া করবেন না যেটা বাবা - মা দের বড্ড বদ-অভ্যাস ( অন্তত যারা স্কুলে পরে, রাস্তাঘাটে বেরহয় সেই সকল বাচ্চাদের )
নিজেরা ন্যাড়া হয়ে এই রোদে দাড়িয়ে থাকলে কেমন কষ্ট হয় একবার বুঝুন তো দেখি?

সার্থক বোকা সাজা :)


বোকা সাজার মধ্যে একটা অদ্ভুত আনন্দ আছে
আর সেই আনন্দটুকুর জন্যে বোকা সাজা মন্দ কি?
অফিস থেকে বিকেলে বাড়ি ফেরার বাস ধরব বোলে চিত্পুর রোড দিয়ে হাঁটছি,
দেখি রাস্তার ধারে একটা পেট্রল পাম্পের খোলা জায়গায় বেশ কিছু কচি-কাঁচা ছেলে মেয়ে হই হুল্লোর করছে -
" বিকেলের খেলা "
কতই বা বয়স হবে ওদের এই বড়জোর পাঁচ ছয় ...
ওরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথ চলতি মানুষদের ডেকে বলছে " ভাইয়া আপকে মাথে পর কাউয়া নে টাট্টি কিয়া হে "
কেউ ওদের দিকে তাকাচ্ছে কেউ নিজের তাড়ায় হেঁটে চলে যাচ্ছে ...
যথারীতি আমাকে উদ্দেশ্য করেও ওরা বললো -
" ভাইয়া আপকে মাথে পর কাউয়া নে টাট্টি কিয়া হে "
আমিও একটু থমকে ভ্যাবাচ্যাকা মেরে ওদের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত রাখলাম,
আর সঙ্গে সঙ্গে ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো
আমাকে বোকা বানাতে পারার খুশীতে ছেলে মেয়ে গুলো খিলখিল করে হেসে হই হই করে নেঁচে উঠলো
সেই আনন্দ দেখার মতো ...
আমিও বোকা বোকা মুখ করে পথ চলতে লাগলাম :)
সার্থক বোকা সাজা ...
সত্যি কখনো কখনো  বোকা সাজার মধ্যে একটা অদ্ভুত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ...

... " রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও গো এবার যাবার আগে "


" বসন্তে কোকিল কেশে কেশে রক্ত তুলবে এ আবার কিসের বসন্ত? " সেই কবে মৃত্যুর আগে কোনো এক তরুণ কবি এ কথা বলে গেলেও আজও বসন্ত তার আপন নিয়মেই ডালিভরে রূপ-রস-গন্ধ বিলি করতে আসে এই শহরের অলিতে-গলিতে । ধুলোমাখা ফুটপাথে লাল-হলুদ পাতারা যখন নিঃশব্দে হাওয়ায় ঝরে পড়ে, তখন আকাশের দিকে আলো ছড়িয়ে দেয় পলাশ-শিমুলের সূর্য । গাছের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা কোকিলের ডাক, সকালের পাতিলেবু রঙের গুঁড়ো গুঁড়ো মিহি রোদ আর বুনো টিয়ার সবুজ পাখায় জেগে ওঠে ঋতুরাজ । আসমানী বিকেলগুলো আসতে আসতে গোলাপী হয়ে ওঠে, যা আমার মতো হাড়িচাঁচার মনকেও বুঝিয়ে দেয় যে অবশেষে এই দেশলাই বাক্সের শহরে হাজির - " আনন্দ-বসন্ত-সমাগমে"

ঠিক এই সময় বিকেল শেষে একটা অদ্ভুত হাওয়া দেয়, মা বলে এই হাওয়া গায়ে লাগাতে নেই, মায়ের কথার অন্তর্নিহিত মানে খুজতে বসিনি কোনদিনই শুধু বুঝি মায়ের বয়সী মানুষেরা কতো কিছু জানে, তারা জানে শুধু নিছক একটা হাওয়া মানুষকে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে দিতে পারে । তবু ছোটবেলায় মন কেমন করা সেই হাওয়ার মাঝে যখন পড়তে বসতাম তখন বিকেল শেষ হয়ে আসতো । সামনের বইয়ের পাতায় সমুদ্রগুপ্ত কে খুলে রেখে জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম দুরে বাবলিদের উঁচু বাড়ির চৌকোনো চিলেকোঠাটার দিকে । আলো ছুটি যাওয়া বিকেল শেষে সেই ছাদে এসে বসতো ঘরে ফেরা কাকের দল, আর কখন যেন মানুষের গন্ডি ছেড়ে আমার অপরিণত মন, জায়গা করে নিতো কাকেদের ভিড়ে ।

অবিস্যি বসন্তের কাকেরা বড্ড চঞ্চল, রোজ সকালে দাঁত মাজার সময় খেয়াল করি আমার বাড়ির ছাদ লাগোয়া রাশি রাশি মঞ্জরীতে ভরা আমগাছটায় বাসা বেঁধেছে এই সদাচঞ্চল কাকেরা । সামনের রাজুদাদের শ্যাওলা মাখা কুয়োতলার কোনায় রাখা ঝাঁটা থেকে ঠোঁটে করে একটা একটা করে কাঠি খুলে নিয়ে এসে জড়ো করছে সেই বাসায় । তাছাড়া কদিন ধরেই দেখছি আমাদের চিলেকোঠার ঠাকুর ঘরে মা কালির ফটোটার পিছনে আবার সংসার পেতেছে চেনা চড়াই দুটো, রোববারের দুপুরে ওদের বাসা বোনা দেখি, কোত্থেকে সারা রাজ্যের শুখনো ঘাস-পাতা জড়ো করে এনেছে ফটোর পিছনটায় । দুজনে ঠোঁটে ঠোঁট ঘসে খুনসুটি করে, যেন " এ তেরা ঘর এ মেরা ঘর " ছবির শুটিং চলছে । আর ওই হাসিন ঘরেই এই বসন্তে ওরা আবার উপহার দেবে ছোট্ট দুটি ছানা, তাদের কিচিরমিচির শব্দে ভরে উঠবে এই ঘর-সংসার । তারপর একদিন বাসা ফেলে, শুখনো খড়-কুটো ফেলে, ফটোর পিছনের অন্ধকারকে দুরে সরিয়ে উড়ে যাবে আকাশের নীলিমায় । এ যেন কবির কথাই সত্যি করে তোলে বারবার - " রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও গো এবার যাবার আগে "

হবে নাই বা কেন? বসন্ত যে রঙের উত্সব, সারা বছরের ধুসর-ধুলোমাখা দিনগুলোকে রাঙিয়ে দিয়ে যাবার উত্সব, দোল উত্সব । কোনো রঙ আমার এই প্রাগৈতিহাসিক শরীরটাকে কোনদিন রাঙিয়ে তুলতে না পারলেও এই বিবর্ণ দেহের আনাচে-কানাচে রঙ খেলার কিছু মিষ্টি অনুভুতি আজও জীবাশ্ম হয়ে বেঁচে আছে । মনে আছে ছোটবেলায় আমরা যেই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম তার চারপাশে অনেক ছোট ছোট ঘর ছিল আর সেই ছোট ছোট ঘরের বড় বড় দাদা-দিদিরা মিলে বাড়ির মাঝখানের ছোট্ট চারকোনা উঠোনটায় দোলের আগেরদিন রাতে নেড়াপোড়া করত । প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উঠোনে জড়ো  করা শুখনো নারকোলের পাতা ও ডালপালা দিয়ে তৈরী বুড়ির ঘর যখন জ্বলে উঠতো তার পলাশ-শিমুল আগুনে-রঙ রাঙিয়ে দিতো আমাদের রাতের আকাশ । সেই ফাগুনের অদম্য আলোয় বারান্দার এক কোনে দাড়িয়ে থাকতাম আমি, উদ্যাম আগুনের নৃত্যে আর বড়দের হই-হুল্লোরে আমিও নেঁচে উঠতাম, মাঝে মাঝেই দৌড়ে যেতে চাইতাম উঠোনের মাঝখানটায় । কিন্তু মা, দাদারা কেউ না কেউ পরনের স্যান্ডো গেঞ্জিটা অথবা প্যান্টটা টেনে ঠিক আটকে দিতো সন্ধ্যের সেই আক্ষেপ মিটে যেত একটু রাত বাড়লেই, যখন দাদা কারখানা থেকে বাড়ি ফিরত আমার জন্য একটা পেলাস্টিকের পিচকারী আর একটা বেলুনের প্যাকেট কিনে নিয়ে । ওই বেলুনগুলোতে আমি রঙ-জল ভরে ছুড়তাম না, ওগুলো রাতে দাদা একটা একটা করে ফুলিয়ে দিতো আর আমি খাটের কোনায়, জানলার পাল্লায়, দাদার সাইকেলে, অথবা গামছা মেলার দড়িতে ঝুলিয়ে রাখতাম ।  পরদিন সকালে দাদা একটা বালতির জলে জামা কাপড় কাচার নীল রঙ গুলে দিতো, আমি সেই বালতি থেকে পিচকারীতে রঙজল ভরে দুয়োরের সামনের পেঁপে গাছটার গোড়ায় ছুড়তাম । কাকভোরে আমার রঙ খেলার সাথী বলতে ছিল এই পেঁপে গাছটা আর আমার মা । মা নিমপাতা ঝরে পড়া উঠোন ঝাট দিতে দিতে, বারোয়ারী কল থেকে জল ভরে আনতে আনতে, বাসন মাজতে মাজতে যখনই আমার কাছে এসে দাড়াত আমি পিচকারী দিয়ে মায়ের সারা গা রঙ জলে ভিজিয়ে দিতাম । আজ বুঝি মা'রা কত ভালো হয়, ওই ভেজা শরীরেও কাজ করতে করতে মা আমাকে খেলার সময়টুকু দিতো, কখনো বিরক্ত হত না । আসলে মা'রা তো পুকুরের মতো, রঙ খেলার পর দামাল ছেলেরা যেমন পুকুরের সবুজ ঘন জলে এসে ঝাঁপ মারে তখন তাদের সারা দেহের লাল, হলুদ, সবুজ রঙগুলো পুকুরের জলে মিলে  মিশে একাকার  হয়ে যায় । আমার মা ও তেমনি আমার সমস্ত রঙিন স্বপ্নগুলোকে নিজের গায়ে এঁকে বহন করে চলত । একটু বেলা বাড়লেই আসেপাশের ছোট ছোট ঘরগুলো থেকে বেরিয়ে আসত রাখিদি, দীপাদি, বন্যাদির দল, তারা বড়দের রংখেলায় মেতে উঠতো । মাঝে মাঝে দৌড়ে এসে আমার লাল টুকটুক ফর্সা গালেও রং মাখিয়ে যেত । সেই রঙ সময়ের ইতিহাসে জীবাশ্ম হয়ে গেলেও তার গোলাপী আভা আমি আজও অনুভব করি । স্নান সেরে মা যখন পুজোয় বসত ঠোঙ্গা থেকে বার করে গোলাপী, হলুদ আর সাদা রঙের হাতি, ঘোড়া পুতুলের চিনির মঠ থালায় রাখতো ঠাকুরের সামনে । তবে পুজোর আগেই মা একখানা মঠ আমার হাতে গুঁজে দিতো আর আমিও মহা আনন্দে চুপ করে বসে থাকতাম । আমরা বামুন পরিবার তাই দোল পূর্নিমার বিকেল শেষে দেখতাম মায়ের থেকে যারা বয়সে ছোটো তারা আসতো  মাকে আবির মাখিয়ে প্রনাম করতে । মা তাদের হাতে মঠ- ফুটকড়াই খেতে দিতো আর প্রতিবার আমিও কিছু ভাগ পেতাম । ছোটবেলার দোল উত্সবের দিনগুলোর সেই সুন্দর স্মৃতি আজও মনে গেঁথে আছে ।

এখন রঙের উত্সবে আমার অফিস ছুটি থাকে, উঁচু বাড়ির ঝুল বারান্দায় দাড়িয়ে সারাদিন পাড়ার কচি-কাঁচা ছেলে মেয়ে দের হই-হুল্লোর দেখি তবে নিজেকে আর রাঙিয়ে তোলার চাহিদা অনুভব করি না । থেমে থাকা ছিন্ন ভিন্ন হাসির মতো পুরোনো সেই দেয়ালের ছাপ ছাপ রঙ, চৌকোনো উঠোন, দাদার সাইকেল, গোলাপী গাল, পিতলের থালায় রঙিন মঠ, মায়ের ভেজা শরীর জেগে আছে আমার চারপাশে । এটাই আমার জগৎ আমার জীবন । তবে আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষকে জীবনে একবার রঙ খেলা উচিত, একমাত্র বসন্তের রঙই মানুষের বিবর্ণ জীবনকে রাঙিয়ে তুলতে পারে । পৃথিবীর কাউকে কোনদিন যেন সেই সার্থপর দৈত্যটার মতো আফসোস না করতে হয় - " How selfish I have been, now I know why the spring would not come here " । তাই প্রত্যেক মানুষের মনের বাগানে বসন্ত জাগ্রত হোক, বসন্তের আকাশে আকাশে চন্দনের গন্ধ ভাসুক , গাছভরা বকুল ফুল ঝরে পড়ুক …

বত্সর শেষে লাল-হলুদ ফুল বিছানো পথে পরিশ্রান্ত পথিক যে ছায়াপথ এঁকে যায় আগামীর সূর্য সেই পথেই নতুন আলো ঝরায়, সেই পথেই পাখি গান গায়, আকাশী-নীল ছেলেদের সাথে গোলাপী-হলুদ মেয়েরা পথে নামে, আবার ভালবাসা উপচে পড়ে । আর এই ভালবাসার বসন্তের জন্য, এই সত্যিকারের রঙের জন্য মানুষের অপেক্ষা থাকে চিরকাল, কোনো এক অসম্পূর্ণ চাঁদের ভাঙ্গা বৃত্তের মতো ...

" চিং চাং "


এবার আমার একটা কবিতা বলি কেমন?
নমস্কার ~
স্বনামধন্য, রাজা-মহারাজাধিরাজ, বিক্রমাদিত্য, শ্রী তর্কলন্কার, তর্করত্ন মহাকবি বাপ্পানন্দ মহারাজের একখানি অস্কার পাওয়া কাব্যগ্রন্থ " চিং চাং " থেকে এক টুকরো কবিতা বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষে এখানে আপলোড করা হলো ...

চালতা গাছে আলতা পায়ে
কাঠবেড়ালির মেয়ে
পা দুলিয়ে লেজ ঝুলিয়ে
উঠলো ভজন গেয়ে
ভজন শুনে কোলা ব্যাঙ
সাগরে দিলো পাড়ি
কাঠবেড়ালি উড়ে গেলো
রামধনুদের বাড়ি
জলের তলায় তারাগুলো
জ্বাললো তখন বাঁতি
নীল আকাশে মেঘের ভেলায়
পাখনা মেলে হাঁতি
হুতুম প্যাঁচা ঘুড়ি উড়োয়
রোদ চশমা পরে
গাইছে গাধা গজল গান
কীর্তনের সুরে
গল্পে গরু গাছে ওঠে
এটা সবার জানা
ভাবতে তবে ক্ষতি কি?
আমি বিশ্বকবির ছানা ...

Monday, February 25, 2013

দুপুর


আপাতত নিরীহ দুপুরটাকে বড্ড শান্ত মনে হয়
শুধু পুকুর ঘাট থেকে একটা শব্দ অনবরত ভেসে আসচ্ছে ...
কাপড়কাচার শব্দ,
সেই সঙ্গে আরো কিছু শব্দ মিলে মিশে যাচ্ছে,
অবিরাম কাকের ডাক, মুড়িয়ালার হাঁক, সাইকেলের শব্দ !


আজ অফিসে যাইনি, ছাদে দাড়িয়ে শেষ শীতের রোদের ওমটাকে গায়ে মেখে নিচ্ছি ...
বহুদিনপর কোনোও রোদ প্রাগৈতিহাসিক এই দেহটাকে ছুঁলো ...
প্রত্যেক মানুষের জীবনে অন্তত একবার রোদ পোহানো দরকার,
দেহের প্রাচীন জীবাশ্মগুলো এতে প্রাণ ফিরে পায় ...
কখন জানি না এই রোদ ছাদের মেঝেতে আমার একটা ছায়া এঁকে গেছে,
নিজের ছায়াকে দেখে নিজেকে মহীরূহ বলে মনে হলেও,
এই মহীরূহকে তোয়াক্কা না করেই দুটো চড়াই চিলেকোঠার ঠাকুর ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে,
হয়তো নতুন করে বাসা বাঁধবে ...
নিচ থেকে মা ডাকে - " কিরে ভাত খাবি না? "
আমি সাড়া দিইনা, নীচে নেমে আসি ...
মায়ের ডাক ছাড়া,
আপাতত নিরীহ দুপুরটাকে বড্ড শান্ত মনে হয়