Tuesday, June 25, 2013

" দো বিঘা জমিন "


বিকেল শেষ, নিভে আশা আলোয় ধুসর শহরতা একটু একটু করে গোলাপী হয়ে উঠছে !
সন্ধ্যার শহরে কেউ কেউ বাড়ি ফিরছে আবার কেউ ফুটপাথে পসরা সাজিয়ে বসছে, শুরু হচ্ছে দেনা পাওনা !
ছুটির রাস্তায় পায়ে পায়ে ব্যস্ততা, বাস, ট্যাক্সি, অটো-রিক্সার ইদুর দৌড়ে শহরের ফুটিফাটা নগন্য অংশ গুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে, আসলে আমরা বড় কিছু পাবার আশায় সবসময় জীবনের ছোট্ট নগন্য জিনিসগুলোকে, সময়টাকে অবহেলা করি, এগিয়ে যাবার দৌড়ে হারিয়ে ফেলি পায়ের নীচের ছোট্ট জমিটাকে । কিন্তু যাদের জীবনে এই ছোট্ট সময়টা, এই ছোট্ট জমিটুকু বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন একমাত্র তারাই সেটা সযত্নে আগলে রাখে " দো বিঘা জমিন " এর মতন ...

... অফিস ফেরতা বাড়ি ফেরার মুখে বড়ো রাস্তার ক্লাবটার সামনে একটু দাড়িয়ে আছি, দেখি রাস্তার উল্টোদিকের ফুটপাথে এক কাঁচাপাকা চুলের শীর্ণকায় ভদ্রলোক, পরনে কালো প্যান্ট আর স্যান্ড গেঞ্জি | একটা বন্ধ পান বিড়ির দোকানের সামনের দু'হাত চওড়া জমিতে খুব যত্ন করে জল ছিটিয়ে ঝাঁট দিছে । আমার তেমন কোনো কাজ নেই তাই আমিও বেশ কিছুক্ষণ ওখানে দাড়িয়ে রইলাম, দেখি লোকটি তারপর একটা নীল প্লাস্টিক ভাজ করে মাটিতে পেতে তার উপর ব্যাগ থেকে এক এক করে নানান ধরনের শুখনো গাছের ডাল, পাতা, শুখনো ছোটো ফল, মাদুলি, সুতো আরও কতো কি সেই প্লাস্টিকটার উপর সাজিয়ে রাখছে, এরপর সামনের মাটিতে জলের ছিটে দিয়ে দুটো ধুপকাঠি ধরিয়ে পুঁতে দিলো আর পাশে একটা ছোটো প্লাস্টিকের বালটিতে জল নিয়ে ও নিজের ব্যাগটাকে গুছিয়ে নিয়ে বসে পড়ল পসার সাজিয়ে ।
ততক্ষণে দিনের আলো ছুটি নিয়েছে, শুধু স্ট্রীট লাইটের জংধরা আলো এসে পড়েছে লোকটির বিবর্ণ মুখে আর সেই আলোয় ভিজে সে আগলে রাখছে তার খুব সাধের " দো বিঘা জমিন " টাকে, তার ও তার পরিবারের পেট ভরে খেয়েপরে বেঁচে থাকার হয়ত এটাই একমাত্র অবলম্বন ।

বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম, সেই শীর্ণকায় মানুষটির জ্বালানো কমদামী ধুপের গন্ধ বাতাসে না ভাসলেও স্ট্রীট লাইটের জংধরা আলোর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারিপাশে । বুঝতে পারছি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আলোর যেমন আলাদা আলাদা গন্ধ থাকে তেমনি প্রত্যেক মানুষের জীবনের একটা গন্ধ আছে, একটা ইতিহাস আছে ...

আলাদা আলাদা

No comments:

Post a Comment