Saturday, May 26, 2012

মে দিবস ~ আর কতগুলো নীল প্রজাপতির স্বপ্ন


কাল মে দিবস, ছুটি | ভেবো না যে আমি আবার শ্রমিক? আমি রীতিমত গ্রাজুয়েট পাশ করা অফিসবাবু, যাকে বলে মাছি মারা কেরানী | যাইহোক কাল ছুটি এটাই মোদ্দাকথা, আমি শ্রমিক না কেরানী তাতে কিছু আসে যায় না | কাল পায়ের উপর পা টি তুলে আরাম করে ছুটি এনজয় করব আর নাক দেকে ঘুমোবো, কিন্তু ওসব কথার কথা, আমি আবার নাক ডাকতে পারি না, ছোটবেলা থেকেই আমার সাইনাস, তাই নাক দিয়ে শুধু হাওয়া বেরোয়, শব্দ হয় না |  তাই এই ছুটির দিনে বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ঘুম, তারপর ঢুলুঢুলু চোখে ব্রাশ ও স্নান সেরে মায়ের হাতের লুচি আর কালোজিরে দিয়ে তৈরী আলুর ঝোল দিয়ে ব্রেকফাস্ট টা করব | তারপর সারাদিন বিছানায় শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট দেবো, আর তার সঙ্গে দুপুর বেলায় পড়ে ফেলবো এবারের উনিশ কুড়ি টা, এবারের সংখ্যায় স্মরন্জিতের প্রেমের গল্পটা নাকি ফাটাফাটি | আমার তো আর এ জীবনে প্রেম হলো না তাই ছুটির দুপুর গুলো প্রেমের গল্প পরেই কাটিয়ে দিলাম | ওদিকে আমারই বন্ধু পল্টু, ব্যাটা এইট পাশ, কতবার আমার খাতা দেখে চুরি করে উতরে গেছে | সেও আমার নাকের ডগা দিয়ে, বিকেল বেলায় নিজের লাল চিকনাই মার্কা হিরো হন্ডা বাইক এর পিছন সীটে বুলটিকে চাপিয়ে ভিক্টোরিয়া ঘুড়ে আসে, এই তো সেদিন বিদ্যার "কাহানি" ও দেখিয়ে নিয়ে এলো |  


যাইহোক কাল ছুটির দিনটাতে আর কোনো কাজ রাখিনি | তাই অফিস থেকে ফিরেই এই সন্ধ্যেবেলায় ছুট লাগলাম বাচ্চুদার দোকানে | একমাথা চুল আর একগাল দাড়ি কেটে নাটোর কোটর হয়ে যখন সেলুন থেকে বেরোলাম, পুরো "দিল চাহতা হে" এর আমির, মাইরি বলছি রং জন্ম থেকেই আমার দুধে আলতা, ফেরবার পথে মধুকাকুর মেয়ে বুলটি এমন ভাবে ঝারি মারলো যে পুরো গলে "গজল" হয়ে গেছি | বুলটির চোখের চাহুনি, আর বাচ্চুদার মাখানো নীল আফটার সেভের গন্ধে মনটা আচ্ছন্ন হয়ে আছে | মনে হচ্ছে চোখের সামনে কত শত নীল প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে, আর ওদের মধ্যে রানী প্রজাপতিটা, তার গায়ের রঙ অবিশ্যি হলুদ, সে হলো মধুকাকুর মেয়ে বুলটি | বাড়ি ফিরে এসে বিছানায় ধপাস করে বসলাম যেন রাজ্য জয় করে ফিরেছি | অবশ্য কোনো এক বাবাজি মায়ের হাত দেখে নাকি বলেছে তার ছোট ছেলে একদিন রাজা হবে, তবে কোন দেশের সেটা বলতে পারেনি | তোমাদের চুপি চুপি একটা কথা বলে রাখি রোজ সকালে যখন বাথরুমের কোমটে গিয়ে বসি তখন নিজেকে কেমন রাজা রাজা বলে মনে হয় | বাদ দাও রাজা সাজা বুঝি আর এ জীবনে হলো না | নীল আফটার সেভের গন্ধে যখন চারপাশ আচ্ছন্ন ঠিক তখনি মা এসে বলল "কি রে বাবু মুড়ি খাবি?" কোন দেশের রাজা মুড়ি চিবিয়েছে তার খবর আমার জানা নেই... তাই বাংলার পাঁচের মতন মুখ করে গম্ভীর ভাবে বললাম "না" | এরপর সোজা বাথরুমে ঢুকে পরলাম, দেহের কাপড় খুলে আয়নার সামনে দাড়ালাম, নিজেকে ছাল ছাড়ানো ছাগলের মতন লাগলো, ভয়ে তাড়াতাড়ি শাওয়ার চালিয়ে দিলাম | কৃত্তিম বারিধারায় দেহের নোনা ঘামের সঙ্গে সেই নীল আফটার সেভের গন্ধও যেন ধুয়ে মুছে গেল | 


সেলুন থেকে ফেরবার পথে দেখলাম পাড়াটা বেশ সেজে উঠেছে, লাইটের ডুম গুলো কে লাল চকমকি কাগজে মুড়ে, আর লাল পতাকায় ঢেকে গেছে গোটা পাড়া, ছোটবেলায় আমি মে দিবস বলতে বুঝতাম মাক্সিম গোর্কির মা, লেলিন, আর উত্পল দত্ত | এখন বড় হয়ে বুঝেছি মে দিবস মানে মান্না দে এর জন্মদিন | মে ডে মানেই মান্না ডে | ইতিহাস আমার কোনদিনই প্রিয় নয়, অবিশ্যি ক্লাস নাইনে একবার ইতিহাসে সাতাশি নাম্বার পেয়েছিলাম | বন্ধুরা বলত ওটা নাকি যোগেশ স্যার (যাকে আমরা আলু স্যার বলে খেপাতাম) আমাকে ভালোবেসে দিয়েছিল আমি ফার্স্ট বেঞ্চে বসি বলে | তবে এ কথা না মেনে কোনো উপায় নেই ইতিহাস সম্মন্ধে আমার জ্ঞান খুবই কম, অশোক, আলেকজান্ডার, সমুদ্রগুপ্ত, হর্ষবর্ধন পরবর্তী ইতিহাস আমাকে রোমাঞ্চিত করে না | আলেকজান্ডারের যুগ থেকে যেই ব্রিটিশ যুগে আসি নিজেকে যেন অপুর নিশ্চিন্তিপুর থেকে আজকের যাদবপুরে হারিয়ে ফেলি | তাই মে দিবস নিয়ে আমার জ্ঞান নগন্য | মে দিবস বলতে আমি আজও বুঝি কাস্তে হাতুড়ি মার্কা লাল পতাকা, যেগুলো শম্ভুকাকুর চায়ের দোকানের মাথায়, অথবা লাইট পোস্টের গায়ে গোজা থাকে | আমার কাছে মে দিবস মানে শুধুই ছুটির দিন বড়জোর একটা নীল আফটার সেভের গন্ধ আর কতগুলো নীল প্রজাপতির স্বপ্ন |