ভরদুপুরে চোখ কচলাতে
কচলাতে গাছের
তলাতে বসতেই,
উপর থেকে
কেউ বলে
উঠলো 'ফ্যান্ছো',
ঘাড় ঘুরিয়ে
উপরের দিকে
তাকাতেই দেখি খ্যাংড়াকাঠি এক চ্যাংড়া ছুঁচো
লেজ ঝুলিয়ে
পিটিপিটি হাসে,
দেড়হাত বেগুন
গাছে পাঁচ
হাত লেজটাকে
গুজিয়ার মত
পেঁচিয়ে চশমার
তলা দিয়ে
আমার দিকে
গম্ভীর ভাবে
তাকিয়ে আবার
ফিচকি হেসে বলে উঠলো 'ফ্যান্ছো'
...
এবার আমার মাথা
গেল টক
করে গরম
হয়ে, দাঁত
কিড়মিড় করে
রেগে বললাম
'এই কে
রে তুই?'
আবার গম্ভীর
গলায় উত্তর
পেলাম আমার
নাম 'ফ্যান্ছো', আমি রেগে বললাম
মোটেই না,
'তোর নাম ফ্যান্ছো হতেই
পারে না...
অমনি ফ্যান্ছো বলে
কিনা, ' বাহ
রে বাহ
হাতিবাগানের নাম হাতিবাগান হতে পারে,
হাম্বাবদনের নাম হাম্বাবদন হতে পারে,
আর যদি
ঘতত্কচের নাম ঘতত্কচ হতে
পারে তালে
আমার নামও
বা ফ্যান্ছো
হবে না
ক্যানো, আলবাত
হবে ? আমিও
খানিক ভেবে বললাম, কক্ষনো হতে
পারে না,
ওরকম নাম
রাখলেই হলো?
বইতে ওরকম
নাম লেখাই
নেই...
ফ্যান্ছো বলল, কি
বই?
আমি বললাম তাও
জানো না?
'আহাম্মক একটা, ষষ্টী চরণের
বইতে সব
লেখা আছে,
আমি বললাম,
এ নাম
তোমায় কে
দিয়েছে? ফ্যান্ছো খুশি হয়ে বলল,
কেউ দেয়নি,
ওই শেতলা
মন্দিরের ধারে বিরিঞ্চিবাবার দোকানে
পাঁচু গোয়ালা
বিক্রি করছিল,
আমি তিন
টাকা সতেরো
পয়সায় কিনে
নিলুম, সস্তায়
পেলুম কিনা!...
আমি বললাম, ‘ছিঃ
ছিঃ ছিঃ
ছিঃ শেষে
কিনা তুমি
নাম কিনলে?’
ফ্যান্ছো বলল, ‘কেন?
কি হয়েছে?’
আমি রেগে গরগর
করে বললাম,
‘এটাও জানো
না?’
"নামের আমি নামের
তুমি,
নাম দিয়ে যায় চেনা
নাম যে বড়
ফালতু জিনিস
যায় না তারে
কেনা..."
ফ্যান্ছো খুব জোরে
মাথা নেড়ে
বলল, এখন
উপায়?
আমি গম্ভীর হয়ে
বললাম, 'তোমায়
পুলিশে ধরবে,
ওরা তোমায়
তাইওয়ানে পাঠাবে...
সেখানে সাইত্রিশ দিন
সুয্যি ডোবার
আগে ও
সুয্যি ডোবার
পরে গুনে
গুনে সাইত্রিশ বার, গুড়ো গুড়ো
বরফে ঘষে
ঘষে নাকখত
দিতে হবে,
তারপর সারাগায়ে
আঁটা মেখে
উনিশ ঘরের
নামটা পড়তে
পড়তে পায়ে
হেঁটে উলুডাঙা আসতে
হবে...'
ফ্যান্ছো কাঁদো কাঁদো
মুখ করে
বলে বসলো,
‘উলুডাঙা কেন?’
আমি বললাম, 'উলুডাঙাই
তো ষষ্টীচরন
থাকে, দ্যাখো ফ্যান্ছো তুমি
মেলা ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ কর
না, যা
বলছি মন
দিয়ে শোনো,
উলুডাঙা এসে ষষ্টী চরণের
বাড়ির কুয়োর
জলে চান
করে তেত্রিশ
বার হ্যাঁচ্চ
দিলেই তোমার
শাস্তি মুকুব,
তারপরই তুমি নতুন
নাম পাবে...'
শুনে ফ্যান্ছো বলল,
'ওমা কেন?'
আমি বললাম, 'তাও
জানো না,
ওটাই তো
নিয়ম...
কিন্তু ফ্যান্ছো বলল, 'আমি যে
এখন ঘুমোবো
ছয় মাস?'
আমি কিছুক্ষণ চুপ
থেকে মাথা
চুলকিয়ে বললাম, 'সেই বিধানও আছে,
ঘুমোলে দোষ
নাই'
কিন্তু?
ফ্যান্ছো তড়িঘড়ি বলল,
'কিন্তু কি?'
আমি বললাম, তোমায়
লেপ মুড়ি
দিয়ে ঘুমোতে
হবে, আর
মিহি সুরে
নাক ডাকতে
হবে...
ফ্যান্ছো বুক ফুলিয়ে
বলল, 'ও
এই ব্যাপার?'
আমি বললাম, 'না
আরোও আছে,
ঘুমোনোর আগে
তিন চামচ
নারিকেল তেলে
পাঁচ চামচ
কর্পুর আর
সন্ধব লবন
মিশিয়ে তোমার
লেজে মেখে,
সেই লেজ
একটা বালতির
জলে ডুবিয়ে
গান গাইতে
হবে....
ফ্যান্ছো আবার কাঁচুমাঁচু মুখ করে
বলল, 'সেকি
কি গান?'
আমি বললাম, ‘উদবিড়ালে
খুদ খায়,
মাগুর বাজায়
ঢোল' ব্যাস তালেই সব ঠিক
হয়ে যাবে'
|
ফ্যান্ছো খুশিতে তিনবার
লাফিয়ে জিগ্গেস
করলো, 'আচ্ছা
ভাই এই
দুপুরে তোমার
সাথে এত
অন্তরঙ্গ আলাপ
হলো, তা
তোমার নাম
কি ভাই?'
আমিও আল্হাদে আধখানা
হয়ে বললাম,
'আমার নাম
পেঁয়াজ'
তারপর আমি বললাম,
আচ্ছা আজ
আমি আসি,
ফ্যান্ছো বলল, 'আরো
একটু বসলে
হত না?'
আমি বললাম, 'না
মগের মুলুক
নাকি? আমি
বসি আর
তুমি সেই
সুযোগে আমার বেলা বইয়ে
দাও...'
ফ্যান্ছো তাতে বলল,
'কেন তালে
কি হয়েছে?'
আমি বললাম, 'না
মা কড়াইতে
তেল গরম
করছে, আমিও
সেই ফাঁকে
একটু গা
গরম করতে
বেড়িয়েছিলুম আর তোমার সাথে দেখা
হলো...'
ফ্যান্ছো তড়িঘড়ি বলল,
'কড়াইতে তেল
গরম কেন?
পেঁয়াজি হবে
নাকি?'
আমি বললাম, হ্যা,
ফ্যান্ছো বলল, 'আর
কি হবে?'
আমি বললাম, ‘মাছের ডিম’
ফ্যান্ছো বলল, ‘কোন
মাছ?’
আমি বললাম, 'তাও
জানো না’,
'শাকের রাজা পুঁই,
মাছের রাজা
রুই'
ফ্যান্ছো অমনি বলে
বসলো, 'সান
বাধানো ভুঁই,
গোবর জলে
ধুই'
আমিও বা কম
যাই কেন?
আমার নামও পেঁয়াজ, তাই
আমিও বলে
বসলাম,
'রুইয়ের পেটে ডিম,
তারা হাট্টিমাটিম
টিম'
ফ্যান্ছো বলল, ‘কটা
ডিম?’
আমি বললাম, ‘দুটো ‘
ফ্যান্ছো বলল, ‘কি
রঙ?’
আমি বললাম, 'লাল
আর নীল'
ফ্যান্ছো বলল, ‘ডিম
ফুটে কি
বেরুবে?’
আমি বললাম, ‘ঘোড়ার
ছানা’
ফ্যান্ছো বলল, ‘ওদের
নাম কি?’
আমি বললাম, 'লালকমল
আর নীলকমল'
ফ্যান্ছো বলল, ‘ওদের
নাম কে
দিয়েছে?’
আমি বললাম, 'ষষ্টীচরন'
যেই না বলা
অমনি দেখি
কে যেন বেগুন গাছের
ডালে বসে
পা ঝুলিয়ে
বলছে...
‘হাও মাও খাও,
‘হাও মাও খাও, আমার নাম
ধরে কে
ডাকে রে?
অমনি আমরা দুজনে
লেজ গুটিয়ে
সুড়ুত করে
ফুড়ুত হয়ে
ঝোপের ভিতর
পালিয়ে গেলুম...