Monday, January 21, 2013

সন্ধ্যা


শিশিরধোয়া বকুলপাতা বিকেলবেলায় চুপ 
ঘরেফেরা সুর্যবালক দেখছে তারি রূপ,
গুড়ো গুড়ো পড়ছে শিমুল, ভরছে গাছের তল 
ধানের গোলায় ফিরছে রাখাল, ফিরছে পাখির দল
অবাক চোখে দেখছে শিশু আলোয় আঁধার মেশে!
বিকেলশেষে, সকালবেলা সাজচ্ছে সন্ধ্যা-বেশে 
সাঁজের আকাশ রাঙিয়ে জাগে সন্ধ্যা রাতের তারা 
উড়িয়ে ধুলো ফিরছে ঘরে কাজের মানুষ যারা 
মায়ের হাতে শঙ্খ-প্রদীপ, গন্ধ ধুনো-ধুপ 
উঠোনকোনে কুয়াশাচাপা কাঠালতলা চুপ ...

সকাল


ঘুমঘরেতে রোদ ছুঁয়েছে সূর্যমুখীর ফুল 
পুকুরস্নানে মায়ের মাথায় গামছাভেজা চুল
শেওলাঘেরা কুয়োরতলে কলসিবাটির গান 
রোদউঠোনে, ঠাম্মা সাঁজে মিষ্টিপাতার পান 
রাত্রিমাখা ঘাসের আগায় চড়াই খোঁজে দানা 
নতুন আলোয় সুর খুঁজে পায় দুটি শালিখছানা 
টিনের চালে কুমড়োলতা আলপনা দেয় এঁকে 
সকালবেলার পাখপাখালি উনুনধোঁয়ায় ঢেকে 
ঘুলঘুলিতে রোদ মেখেছে লক্ষ কালি-ঝুল 
পূবআকাশে পাপড়ি ছড়ায় সূর্যমুখীর ফুল ...

ভাব ...


আমি দেখিনা ...
শ্যাওলা-সবুজ জল, বৃত্তাকার ঢেউ
আলপনা দেওয়া আঁখিআমি দেখিনা
দেখলে ভাবের সঞ্চার হয়,
ভাব মনের আদান-প্রদান ঘটায়
কিন্তু ঘুমন্ত সূর্যের আলোয় জলের রঙ কালো,
কালো জলের আঁখির সাথে,
ভাবের খেলা ভালো ...


" আমি ও আমার নদী "



বাড়ির সামনে কালো পিচরাস্তা ...
রাস্তার শেষে ঢাল বেয়ে নেমে গেছে সবুজ নদীর পাড় ...
" আমি আমার নদী "
সেইসময় নদী থেকে ছুঁয়ে যেত একটা নরম হাওয়া আমাকে,
দুপুরবেলায় কাঠের জানলা দিয়ে সুপুড়িবনের ফাঁক দিয়ে সেই নদী আসতো আমার ঘরে,
ঠাম্মা মুখের ভিতর থেকে চিবোনো পানের একটু আমার মুখে পুরে দিতো,
আমি খুব যত্ন করে খেতাম ...
ঠাম্মার খোলাবুকে মাথা গুঁজে আমি গায়ের গন্ধ নিতাম,
"তেজপাতা গন্ধ"
ঠাম্মা গল্প বলত, রাজকন্ন্যা আর পক্ষীরাজের গল্প ..
আমি যেন দেখতে পেতাম ---
বাড়ির সামনে কালো পিচরাস্তা ...
রাস্তার শেষে ঢাল বেয়ে নেমে গেছে সবুজ নদীর পাড় ...
গল্প শুনতাম,
" আমি আমার নদী "

পাগল হাওয়ার দিন আজ ...


পাগল হাওয়ার দিন আজ ...
ভুল বললামপাগল হাওয়ার দিনগুলো ছিল আজ সকাল থেকে হাওয়া দিতো খুব, সেই হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে যেতো গাছপালাআমার শৈশব থেকে কৈশোর

কোন সেই ছোট্টবেলায় টালির ঘরের জানলা দিয়ে সেই হাওয়ার সাথে কথা বলতাম আমি, শান্ত নিরীহ দুপুরবেলার সেই দিনগুলোতে জানলার ফাঁক দিয়ে পা গলিয়ে বসে গাড়ি গাড়ি খেলতাম, পেঁপে গাছের ফাঁক দিয়ে কমলা রঙের রোদ আমার গায়ে আলপনা এঁকে যেতো আর পাশের পুকুর থেকে জলছোঁয়া সেই গন্ধমাখা হাওয়াটা বড় বড় নারকেল গাছের মাথা ছুঁয়ে আমার গা ঘেঁষে বসতো সেই গন্ধে মিশে থাকতো আরো একটা গন্ধ, মা হাড়ির মুখে পুরোনো কাপড় জড়িয়ে পুলি পিঠে সিদ্ধ করতো, ভেজা চালের সেই কুয়াশা কুয়াশা গন্ধে দুপুরবেলায় বিকেল নামতো আমার শহরে ...

আজ পাগল হাওয়ার দিন, পাগল হাওয়ার দিন আজ ...
সকাল থেকে হাওয়া দিচ্ছে খুবএলোমেলো হয়ে যাচ্ছে গাছপালা আর সেই হাওয়ায় লাল হলুদ পাতা ঝোরে পড়ছে সকালের বিছানায় ...

শুভ ইংরেজি নববর্ষ ...


শেষের মনখারাপের দিনগুলোতে আমরা কি শুভেচ্ছা জানাতে পারি? হয়ত পারি !
অথবা আমার মত অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মন কি কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে পারে? হয়ত পারে !
আসলে জীবন হলো দিনরাত্রির মত, কালো রাতের পর দিনের আলো ঠেকিয়ে রাখতে পারে কোন বাহাদুর? আমি তো সেখানে অতি নগন্য অনু-পরমানু মাত্র !
তাই আশা আমি করতেই পারি, আসলে আশায় বাঁচে আমাদের মত চাষা ...
আর সেই আশা নিয়ে আমি ভাবতেই পারি কাল সকালের আলো ফোটার  পর থেকে আর কোথাও, কোনো শহরের রাস্তায় মোমবাতি জ্বলবে না,
কোথাও জল-কামান ছুটবে না,
আমার মা, বৌদি, ভাইঝির মতো অন্যের মা, বৌদি, ভাইঝি, বোন, দিদি আমার সব মেয়ে বন্ধু গুলো নির্ভয়ে বেঁচে থাকবে ! ...
ব্রিজ করবার জন্য কেউ একটাও গাছ কাটবে না, কেও বনসাই করবে না,
কেউ ডলফিন কে খুচিয়ে খুচিয়ে মারবে না,
কেউ এয়ারপোর্টের ধারে শেয়াল কে না খাইয়ে মারবে না,
বেশি গরম পড়বে না, বেশি ঠান্ডা পড়বে না, ভূমিকম্প হবে না,
রাস্তার ছেলে মেয়ে গুলো মিড ডে মিল পাবে আর পড়তে যাবে,
ইন্ডিয়া টিম টেস্টে একনম্বর হবে ...
ব্যাস এইটুকু চাহিদা আর কি এমন !!!
আর এই সব আশাগুলো আমি যেন ভোরবেলায় স্বপ্ন দেখি, কারণ ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয় কিনা ...
আগামী নতুন বছরে সবার ভালো হোক, সবাই হাসি খুশিতে থাকুক ...
শুভ ইংরেজি নববর্ষ ...

"সুরভিত অন্টিসেপ্তিক ক্রীম বোরোলীন"


রাতের এই সময়টা আমার ছাদে এসে দাড়াতে খুব ভালো লাগে, কিন্তু আজ ছাদে এসে দাড়াতেই উত্তর থেকে বেশ কিছু হালকা ঠান্ডা হাওয়া আমার গা ছোঁয়াছুয়ি করে চারপাশে ছড়িয়ে গেল, রাতের আকাশ আজ মেঘাছন্ন, মাথার চাঁদের উপর একরাশ মেঘ জমেছে ! সেই ঘষা মেঘের আড়াল থেকে একছটাক আলো ঢেলে দিয়েছে আমার মাথার উপর, আর সেই চাঁদনী আলোয় শহরটা কেমন যেন থমকে গেছে, উত্সব শেষের রাত্রি গুলো নিস্তব্দ উদাস উদাস...
মাঝে মাঝে মনে হয় এতবড় আকাশের নীচে জীবনগুলো কত্ত ছোট ! তবে নিস্তব্দতা আমার বেশ ভালই লাগেনিস্তব্দ সময়গুলোর ফাকে ফাকেই লুকিয়ে থাকে আনন্দ কোলাহলের বীজ...


সেই হালকা ঠান্ডা হাওয়াটা আবার নাচানাচি করে উঠলো,আর সেই হাওয়ায় দুরে রাস্তায় তে-কোনা লাইট পোস্টের আলোয় ঝুলতে থাকা তেলাকচুর পাতাগুলোও নেচে উঠলো ! সুনসান রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট গুলো ছায়া ছায়া হয়ে দাড়িয়ে আছে, যেন আলো ছায়ার নক্সা কাটা আদিম মানব মানবী, দু চারটে কুকুর নিজেদের জায়গা দখল নিয়ে তুমুল ঝগড়া শুরু করেছে যা এই আদি অকৃত্তিম নিস্তব্দতাকে খানখান করে দিচ্ছে ...
আকাশের গোমড়া মুখো মেঘগুলোর ফাঁক দিয়ে অলস চাঁদের আলো আমার বাড়ি লাগোয়া বিশাল ছাতিম গাছটার পাতার ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়ে যাচ্ছে , ছাতিম ফুলের আকাশ আকাশ গন্ধটা আমার শরীরে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে দেহটা শিরশির করে উঠলো ! শীত আসছে ...
কয়েকদিন ধরেই কেমন যেন শীত শীত লাগছেভোরের দিকে ফ্যানের হাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়কার্তিক মাসশেষ হতে চললোএকটু বৃষ্টি পরলেই শীতটা আরোও জাকিয়ে পড়বে ! সকালের খবরের কাগজ অথবা রোজ টিভিতে "শীতকাল আসছে" বলে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে ! মানুষের এখন পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা  ক্ষমতা খুবই কম তাই হয়ত তাদের শীতের আগমনের কথা মনে করিয়ে দিতে হয় ! বর্ষা, শীতকে বোঝার জন্য আবহাওয়া অফিসের ঘোষণার প্রয়োজন আমার কোনদিন পড়েনি, প্রকৃতির ক্যানভাসে আমার মন, রং-জলে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে !!  সেই কোন ছোট্টবেলা থেকেই জানলা দিয়ে যখন আলাদা রকমের হলুদ রোদ আমার ঘরের মেঝেতে এসে পড়ত, মা যখন দীর্ঘদিন লোহার ট্রান্কে আটকে থাকা লেপ-কম্বল-চাদর-সোয়েটারগুলোকে মাদুর পেতে উঠোনের রোদে শুকোতে দিত, তখনই বুঝতাম শীত আসছে আমার শহর জুড়ে...
তখন শীতে কাকভোরে ঘুম ভাঙিয়ে দিত একদল কীর্তনিয়ার খোল করতালের গান, আধো ঘুম চোখে গায়ের চাদর টাকে মাথায় তুলতে গিয়ে পা দুটো খালি হয়ে যেত, আর ঠান্ডা হাওয়া গুলো পায়ে শুরশুরি দিত ! মাঝে মাঝেই দুপুর বেলায় রেডিও থেকে শুনতে পেতাম "সুরভিত অন্টিসেপ্তিক ক্রীম বোরোলীন" !! আর রাতের আকাশে তারাদের সাথে পাল্লা দিয়ে জ্বলে উঠত দেশলাই বাক্সের মত বাড়িগুলোর কার্নিশে বাঁধা লাল নীল হলদে সবুজ রঙের বাঁশের লাঠির মাথায় বাঁধা ডুম লাইট গুলো ! আমাদের আকাশ প্রদীপ ...
এখন এই বুড়ো বয়সে মনে হয় , শাওয়ালা কাকুদের হাকডাকে, দুপুরবেলায় লেপের তুলো ধোনা যন্ত্রের ছন্দে আর ফুলকাদার বাড়ির একঝাক পায়রা ওড়ার ডানার শব্দে হয়ত শীত নামত এই শহর কলকাতায় ! ...

আজও শীত নামে এই শহরে, আজও আমার বাড়ির এককোনায় বাঁশের লাঠির মাথায় বাঁধা লাল রঙের ডুম লাইট টা আকাশের দিকে  প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেআলোটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম, তারপর আকাশের দিকে তাকলাম, কাওকে হয়ত খোজার চেষ্টা করলাম ! মেঘে ঢাকা  আকাশের গায়ে তারার চিন্হ মাত্র নেই, কালপুরুষ তাও যেন উধাও হয়ে গেছে, হয়ত উত্সবের শেষে সেও বড্ড ক্লান্ত তাই মেঘের আড়ালে চলে গেছে ! এই লোকটাকে আমার বেশ লাগে তাই রোজ রাতে একবার আসি ওকে দেখবার জন্য... "পনেরোশো আলোকবর্ষ" কত দূর... 
আকাশে কালপুরুষের যে আলোটাকে আমরা আজ দেখছি সেটা পনেরোশো বছরের পুরনো আলো, এই কালপুরুষ ধংস হয়ে যাবার পনেরোশো বছর পরও আমরা আকাশে তাকে দেখতে পারব! কে বলেছে আমরা চোখে  যা দেখি সেটাই সত্যি? সত্যি সেটাই যা আমরা অনুভব করিকালপুরুষ আলো আঁধারের মায়াবী খেলায় সত্যি মিথ্যে কে রং-জলে মিলিয়ে মিশিয়ে দেয় তার আকাশের ক্যানভাসে, অনেকটা শীতের কুয়াশার মত! ঝাপসা কুয়াশার পিছনেও একটা সুন্দর ছবি থাকে আর সেটাই শীতের সৌন্দর্য্য ! পাতাঝরার মরশুমেই লুকিয়ে থাকে কিশলয়ের স্বপ্ন... 
রবি ঠাকুর তার সহজ পাঠে শীত কে ভালোবেসে আপন করে নেন নি, কিন্তু আমার শীত বেশ ভালই লাগে তাই আমি আনন্দে গুনগুন করে গাইতেই পারি ...
"টুপ টুপ টুপ ঘাসের আগায়, শিশির গুলো চুপ
চুপ চুপ চুপ কুয়াশা আঁকছে, ভোরের বেলার রূপ
শীত শীত শীত ঠান্ডা হাওয়া, চাঁদর মোড়া রাতি
রাত জাগা সব তারা গুলো, জ্বালিয়ে দে তোর বাতি" ...

সেই হালকা ঠান্ডা হাওয়াটা আবার নাচানাচি করে উঠলো, দূর থেকে ট্রেনের একটা শব্দ ভেসে আসছে, রিক্সায়ালার ক্লান্ত চোখ বেয়ে, চায়ের দোকানের নিভে যাওয়া উনুনের মধ্যে দিয়ে গভীর রাত নামছে এই শহরে, আর আমার চোখে নামছে ঘুম ...  

ফ্যাঁচ ফ্যাঁচে, ফ্যান্ছো


ভরদুপুরে চোখ কচলাতে কচলাতে গাছের তলাতে বসতেই, উপর থেকে কেউ বলে উঠলো 'ফ্যান্ছো', ঘাড় ঘুরিয়ে উপরের দিকে তাকাতেই দেখি খ্যাংড়াকাঠি এক চ্যাংড়া ছুঁচো লেজ ঝুলিয়ে পিটিপিটি হাসে, দেড়হাত বেগুন গাছে পাঁচ হাত লেজটাকে গুজিয়ার মত পেঁচিয়ে চশমার তলা দিয়ে আমার দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আবার ফিচকি হেসে বলে উঠলো 'ফ্যান্ছো' ...
এবার আমার মাথা গেল টক করে গরম হয়ে, দাঁত কিড়মিড় করে রেগে বললাম 'এই কে রে তুই?'  আবার গম্ভীর গলায় উত্তর পেলাম আমার নাম  'ফ্যান্ছো', আমি রেগে বললাম মোটেই না, 'তোর নাম ফ্যান্ছো হতেই পারে না...
অমনি ফ্যান্ছো বলে কিনা, ' বাহ রে বাহ হাতিবাগানের নাম হাতিবাগান হতে পারে, হাম্বাবদনের নাম হাম্বাবদন হতে পারে, আর যদি ঘতত্কচের নাম ঘতত্কচ হতে পারে তালে আমার নামও বা  ফ্যান্ছো হবে না ক্যানো, আলবাত হবে ? আমিও  খানিক ভেবে বললামকক্ষনো হতে পারে না, ওরকম নাম রাখলেই হলো? বইতে ওরকম নাম লেখাই নেই...
ফ্যান্ছো বলল, কি বই
আমি বললাম তাও জানো না? 'আহাম্মক একটাষষ্টী চরণের বইতে সব লেখা আছে, আমি বললাম, নাম তোমায় কে দিয়েছেফ্যান্ছো খুশি হয়ে বলল, কেউ দেয়নি, ওই শেতলা মন্দিরের ধারে বিরিঞ্চিবাবার দোকানে পাঁচু গোয়ালা বিক্রি করছিল, আমি তিন টাকা সতেরো পয়সায় কিনে নিলুম, সস্তায় পেলুম কিনা!...
আমি বললাম, ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ শেষে কিনা তুমি নাম কিনলে?’
ফ্যান্ছো বলল, ‘কেন? কি হয়েছে?’
আমি রেগে গরগর করে বললাম, ‘এটাও জানো না?’

"নামের আমি নামের তুমি,
নাম দিয়ে যায় চেনা
নাম যে বড় ফালতু জিনিস
যায় না তারে কেনা..."

ফ্যান্ছো খুব জোরে মাথা নেড়ে বলল, এখন উপায়?

আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, 'তোমায় পুলিশে ধরবে, ওরা তোমায় তাইওয়ানে পাঠাবে...
সেখানে সাইত্রিশ দিন সুয্যি ডোবার আগে সুয্যি ডোবার পরে গুনে গুনে সাইত্রিশ বারগুড়ো গুড়ো বরফে ঘষে ঘষে নাকখত দিতে হবে, তারপর সারাগায়ে আঁটা মেখে উনিশ ঘরের নামটা পড়তে পড়তে পায়ে হেঁটে  উলুডাঙা আসতে হবে...'

ফ্যান্ছো কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে বসলো, ‘উলুডাঙা কেন?’

আমি বললাম, 'উলুডাঙাই তো ষষ্টীচরন থাকে, দ্যাখো ফ্যান্ছো তুমি মেলা ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ কর না, যা বলছি মন দিয়ে শোনো, উলুডাঙা এসে ষষ্টী চরণের বাড়ির কুয়োর জলে চান করে তেত্রিশ বার হ্যাঁচ্চ দিলেই তোমার শাস্তি মুকুব,
তারপরই তুমি নতুন নাম পাবে...'

শুনে ফ্যান্ছো বলল, 'ওমা কেন?'
আমি বললাম, 'তাও জানো না, ওটাই তো নিয়ম...


কিন্তু ফ্যান্ছো বলল, 'আমি যে এখন ঘুমোবো ছয় মাস?'

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা চুলকিয়ে বললাম, 'সেই বিধানও আছে, ঘুমোলে দোষ নাই'
কিন্তু
ফ্যান্ছো তড়িঘড়ি বলল, 'কিন্তু কি?'

আমি বললাম,  তোমায় লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে হবে, আর মিহি সুরে নাক ডাকতে হবে...


ফ্যান্ছো বুক ফুলিয়ে বলল, ' এই ব্যাপার?'

 আমি বললাম,  'না আরোও আছে, ঘুমোনোর আগে তিন চামচ নারিকেল তেলে পাঁচ চামচ কর্পুর আর সন্ধব লবন মিশিয়ে তোমার লেজে মেখে, সেই লেজ একটা বালতির জলে ডুবিয়ে গান গাইতে হবে....

ফ্যান্ছো আবার কাঁচুমাঁচু মুখ করে বলল, 'সেকি কি গান?' 

আমি বললাম,  ‘উদবিড়ালে খুদ খায়, মাগুর বাজায় ঢোলব্যাস তালেই সব ঠিক হয়ে যাবে' |


ফ্যান্ছো খুশিতে তিনবার লাফিয়ে জিগ্গেস করলো, 'আচ্ছা ভাই এই দুপুরে তোমার সাথে এত অন্তরঙ্গ আলাপ হলো, তা তোমার নাম কি ভাই?'

আমিও আল্হাদে আধখানা হয়ে বললাম, 'আমার নাম পেঁয়াজ'  

তারপর আমি বললাম, আচ্ছা আজ আমি আসি

ফ্যান্ছো বলল, 'আরো একটু বসলে হত না?'

আমি বললাম, 'না মগের মুলুক নাকি? আমি বসি আর তুমি সেই সুযোগে আমার বেলা বইয়ে দাও...' 


ফ্যান্ছো তাতে বলল, 'কেন তালে কি হয়েছে?'

আমি বললাম, 'না মা কড়াইতে তেল গরম করছে, আমিও সেই ফাঁকে একটু গা গরম করতে বেড়িয়েছিলুম আর তোমার সাথে দেখা হলো...'

ফ্যান্ছো তড়িঘড়ি বলল, 'কড়াইতে তেল গরম কেন? পেঁয়াজি হবে নাকি?'

আমি বললাম, হ্যা,

ফ্যান্ছো  বলল, 'আর কি হবে?'

আমি বললাম, ‘মাছের ডিম


ফ্যান্ছো  বলল, ‘কোন মাছ?’

আমি বললাম, 'তাও জানো না’, 

'শাকের রাজা পুঁই, মাছের রাজা রুই'


ফ্যান্ছো অমনি বলে বসলো, 'সান বাধানো ভুঁই, গোবর জলে ধুই'

আমিও বা কম যাই কেন? আমার নামও পেঁয়াজ, তাই আমিও বলে বসলাম,

'রুইয়ের পেটে ডিম, তারা হাট্টিমাটিম টিম'

ফ্যান্ছো বলল, ‘কটা ডিম?’

আমি বললাম, ‘দুটো ‘

ফ্যান্ছো বলল, ‘কি রঙ?’

আমি বললাম, 'লাল আর নীল'


ফ্যান্ছো বলল, ‘ডিম ফুটে কি বেরুবে?’


আমি বললাম, ‘ঘোড়ার ছানা’ 

ফ্যান্ছো বলল, ‘ওদের নাম কি?’

আমি বললাম, 'লালকমল আর নীলকমল'

ফ্যান্ছো বলল, ‘ওদের নাম কে দিয়েছে?’

আমি বললাম, 'ষষ্টীচরন'

যেই না বলা অমনি দেখি কে যেন বেগুন গাছের ডালে বসে পা ঝুলিয়ে বলছে...

হাও মাও খাও,  ‘হাও মাও খাও, আমার নাম ধরে কে ডাকে রে?

অমনি আমরা দুজনে লেজ গুটিয়ে সুড়ুত করে ফুড়ুত হয়ে ঝোপের ভিতর পালিয়ে গেলুম...