Thursday, September 6, 2012

আমার বন্ধু 'দ্যা গ্রেট বিশ্বকর্মা'দা


আমার বন্ধু 'দ্যা গ্রেট বিশ্বকর্মা'দা
অফিস ফেরত গিয়েছিলাম কলকাতার সেই স্যাতসেতে ভেজা ভেজা এঁদো গলিটায়, সন্ধ্যের কমলা বাতির আলোয় একটা মায়াবী খেলা চলছিলো তখন অলিগলির আনাচে কানাচেলাল্টু, পল্টুরা  তখনও খেলা সেরে বাড়ি ফেরেনি, কিন্তু ওদের বাপ, কাকারা নিজেদের কাজে মশগুল...
দিন যে আর বেশি বাকি নেই, তাই আমার দিকে ফিরেও তাকালো না... 
তাই গল্প করার আশায় এগিয়ে চললাম চির যৌবন সেই যুবকটির কাছে...
দূয়ারে গিয়ে দাড়াতেই মন তা খুশিতে ভরে গেল, আজ সে রঙিন, রং লেগেছে তার দেহে, মনেও...
আর সেই রঙিন মেজাজে অনেকক্ষণ সুখ দুক্ষের নানা গল্প হলো তার সাথে...
বয়সের ছাপ তার মুখে আজও অমলিন, সেই কোকড়ানো চুল, পাকানো সরু গোঁফ, টানা টানা চোখ, টিকালো নাক আর নধর কান্তি দেহ...
দীর্ঘ বয়সের ভারে একটুও ঝুকে পড়েনি, মেরুদন্ড সোজা রেখে আজও হাতীটাকে পিছনে রেখে 'পিসার গির্জার' মত বেঁকে দাড়িয়ে আছে...
সত্যিই তিনি 'গ্রেট বিশ্বকর্মা', আমার কাছে ভগবানদের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ, নাহলে ওই পাহাড় প্রমান হাতী তার কোমর সমান হয় কিভাবে?
তবে  বিশ্বকর্মাদার মনে একরাস অভিমান, সহজ সরল লোহা পেটানো শ্রমিক তো তাই আমার মত প্রানখোলা আপনজনকে কাছে পেয়ে হড় হড় করে সব মনের দুঃক্ষ আমায় বলে দিল...
দুজনে মিলে মুড়ি তেলেভাজা খেতে খেতে সে কত গল্প
বলল, 'কি আর বলি তোমায় বাপ্পা ভাই?’
এই যে কার্তিক আর আমি, ময়ুর ছাড়া কোনো তফাত আছে আমাদের, শুধু তোমাদের ওই 'ন্যাসেনাল বার্ড' টিকে নিজের কাছে রেখেছে বলেই সুন্দরতম? এটা কোনো মাপকাঠি হলোকার্তিক টা সারাজীবন মায়ের আচলে লুকিয়ে রইলো আর আমায় দেখো 'সেল্ফ বিজিনেস' মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লোহা পেটানো চেহারা, সিক্স প্যাক থেকে এইট প্যাক সব পাবে আমার এই খোলচে...
কিন্তু কোনো মেয়ে ফিরে তাকায় এই মুখের পানে? যত্ত সব মদ-মাতাল, নম নম করে আমার পুজো সেরেই সন্ধ্যেবেলায় ঢুগু ঢুগু করতে বসে পড়ে, ঘেন্না ধরে গেল রে জীবনটাতে'...
তাও কয়েক বছর আগে ভেবেছিলাম আমার এই পোড়াকপালেও বুঝি সুদিন এলো যখন শুনলাম তোদের সিঙ্গুরে নাকি টাটা ন্যানো গাড়ির কারখানা হবে, আনন্দে মনটা ভরে গিয়েছিল, এই ভেবে যে 'অতবড় কোম্পানি, নিশ্চই আমার পুজোটা খুব ধুমধাম করে দেবে, অন্তত পরেরদিন দধিকর্মাটা একটু জমিয়ে দেবে'...
'কিন্তু কোথায় কি? কারখানাটা দাড়াতেই পারল না... 
সবই কপাল বুঝলি? 'অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়'...
আমি বিশ্বকর্মাদার গায়ে হাত রেখে বললামবিশ্বকর্মাদা এইভাবে বলছ কেন? খারাপ লাগে, সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো....
বিশ্বকর্মাদা একগাল হেসে বলল, 'ধ্যুর পাগল, তুই কি ভাবলি? আমার খুব মন খারাপ? নাহ! রে পাগলা... যখন দেখি ছোট ছোট, কিশোর বয়সের ছেলেগুলো আমার পুজোর দিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে, 'ভো-কাট্টা' বলে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, পেটকাটি, চাঁদিয়াল গুলোকে অসীম আলোর ঠিকানায় আকাশে ভাসিয়ে দেয় তখন মনটা বড্ড খুশীতে ভরে ওঠে... 
সেই প্রানখোলা আনন্দের নেশায় যে বারবার ফিরে আসি তোদের কাছে...  
নীল, সবুজ, হলুদ, পেটকাটি, চাঁদিয়ালের সঙ্গে যে 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'…
আমার বন্ধু 'দ্যা গ্রেট বিশ্বকর্মা'দাকে বুকে রেখে বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম, আর মনে মনে হাসলাম এই ভেবে 'আকাশে ঘুড়ির চোখ মাটিতে অবন্জ্ঞা'…

No comments:

Post a Comment