রাতের এই সময়টা
আমার ছাদে
এসে দাড়াতে
খুব ভালো
লাগে, কিন্তু
আজ ছাদে
এসে দাড়াতেই
উত্তর থেকে
বেশ কিছু
হালকা ঠান্ডা
হাওয়া আমার
গা ছোঁয়াছুয়ি
করে চারপাশে
ছড়িয়ে গেল,
রাতের আকাশ
আজ মেঘাছন্ন,
মাথার চাঁদের উপর একরাশ মেঘ
জমেছে ! সেই
ঘষা মেঘের
আড়াল থেকে
একছটাক আলো
ঢেলে দিয়েছে
আমার মাথার
উপর, আর
সেই চাঁদনী
আলোয় শহরটা কেমন যেন থমকে
গেছে, উত্সব
শেষের রাত্রি
গুলো নিস্তব্দ
উদাস উদাস...
মাঝে মাঝে মনে
হয় এতবড়
আকাশের নীচে
জীবনগুলো কত্ত
ছোট ! তবে
নিস্তব্দতা আমার বেশ ভালই লাগে, নিস্তব্দ সময়গুলোর
ফাকে ফাকেই
লুকিয়ে থাকে
আনন্দ কোলাহলের
বীজ...
সেই হালকা ঠান্ডা
হাওয়াটা আবার
নাচানাচি করে
উঠলো,আর সেই হাওয়ায় দুরে রাস্তায়
তে-কোনা
লাইট পোস্টের
আলোয় ঝুলতে
থাকা তেলাকচুর
পাতাগুলোও নেচে উঠলো ! সুনসান রাস্তায়
ল্যাম্পপোস্ট গুলো ছায়া ছায়া হয়ে
দাড়িয়ে আছে,
যেন আলো
ছায়ার নক্সা
কাটা আদিম
মানব মানবী,
দু চারটে
কুকুর নিজেদের
জায়গা দখল
নিয়ে তুমুল
ঝগড়া শুরু
করেছে যা
এই আদি
অকৃত্তিম নিস্তব্দতাকে
খানখান করে
দিচ্ছে ...
আকাশের গোমড়া মুখো
মেঘগুলোর ফাঁক
দিয়ে অলস
চাঁদের আলো
আমার বাড়ি
লাগোয়া বিশাল
ছাতিম গাছটার
পাতার ফাঁকে
ফাঁকে ছড়িয়ে
যাচ্ছে , ছাতিম
ফুলের আকাশ
আকাশ গন্ধটা
আমার শরীরে
এমন ভাবে
জড়িয়ে আছে
যে দেহটা
শিরশির করে
উঠলো ! শীত
আসছে ...
কয়েকদিন ধরেই কেমন যেন শীত শীত লাগছে! ভোরের দিকে ফ্যানের হাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়, কার্তিক মাসশেষ হতে চললো, একটু বৃষ্টি পরলেই শীতটা আরোও জাকিয়ে পড়বে ! সকালের খবরের কাগজ অথবা রোজ টিভিতে "শীতকাল আসছে" বলে সংবাদ
প্রচার করা
হচ্ছে ! মানুষের
এখন পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা খুবই কম
তাই হয়ত
তাদের শীতের
আগমনের কথা
মনে করিয়ে
দিতে হয়
! বর্ষা, শীতকে বোঝার জন্য
আবহাওয়া অফিসের
ঘোষণার প্রয়োজন আমার কোনদিন পড়েনি,
প্রকৃতির ক্যানভাসে
আমার মন,
রং-জলে
মিলে মিশে
একাকার হয়ে
গেছে !! সেই কোন
ছোট্টবেলা থেকেই জানলা দিয়ে যখন
আলাদা রকমের
হলুদ রোদ
আমার ঘরের
মেঝেতে এসে
পড়ত, মা
যখন দীর্ঘদিন
লোহার ট্রান্কে
আটকে থাকা
লেপ-কম্বল-চাদর-সোয়েটারগুলোকে
মাদুর পেতে
উঠোনের রোদে
শুকোতে দিত,
তখনই বুঝতাম
শীত আসছে
আমার শহর
জুড়ে...
তখন শীতে কাকভোরে
ঘুম ভাঙিয়ে
দিত একদল
কীর্তনিয়ার খোল করতালের গান, আধো
ঘুম চোখে
গায়ের চাদর
টাকে মাথায়
তুলতে গিয়ে
পা দুটো
খালি হয়ে
যেত, আর
ঠান্ডা হাওয়া
গুলো পায়ে
শুরশুরি দিত
! মাঝে মাঝেই
দুপুর বেলায়
রেডিও থেকে
শুনতে পেতাম
"সুরভিত অন্টিসেপ্তিক ক্রীম বোরোলীন" !! আর রাতের আকাশে তারাদের
সাথে পাল্লা
দিয়ে জ্বলে
উঠত দেশলাই
বাক্সের মত
বাড়িগুলোর কার্নিশে বাঁধা লাল নীল
হলদে সবুজ
রঙের বাঁশের
লাঠির মাথায়
বাঁধা ডুম
লাইট গুলো
! আমাদের আকাশ
প্রদীপ ...
এখন এই বুড়ো
বয়সে মনে
হয় , শাওয়ালা
কাকুদের হাকডাকে,
দুপুরবেলায় লেপের তুলো ধোনা যন্ত্রের
ছন্দে আর
ফুলকাদার বাড়ির
একঝাক পায়রা
ওড়ার ডানার
শব্দে হয়ত শীত নামত এই
শহর কলকাতায়
! ...
আজও শীত নামে
এই শহরে,
আজও আমার
বাড়ির এককোনায় বাঁশের লাঠির
মাথায় বাঁধা লাল রঙের
ডুম লাইট
টা আকাশের
দিকে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে ! আলোটার
দিকে অনেকক্ষণ
তাকিয়ে রইলাম,
তারপর আকাশের
দিকে তাকলাম,
কাওকে হয়ত
খোজার চেষ্টা
করলাম ! মেঘে
ঢাকা আকাশের গায়ে তারার চিন্হ
মাত্র নেই,
কালপুরুষ তাও
যেন উধাও
হয়ে গেছে,
হয়ত উত্সবের
শেষে সেও
বড্ড ক্লান্ত
তাই মেঘের
আড়ালে চলে
গেছে ! এই
লোকটাকে আমার
বেশ লাগে
তাই রোজ
রাতে একবার
আসি ওকে
দেখবার জন্য...
"পনেরোশো আলোকবর্ষ" কত দূর...
আকাশে কালপুরুষের যে
আলোটাকে আমরা
আজ দেখছি
সেটা পনেরোশো বছরের পুরনো আলো,
এই কালপুরুষ
ধংস হয়ে
যাবার পনেরোশো বছর পরও আমরা
আকাশে তাকে
দেখতে পারব!
কে বলেছে
আমরা চোখে
যা দেখি
সেটাই সত্যি?
সত্যি সেটাই
যা আমরা
অনুভব করি
! কালপুরুষ আলো আঁধারের মায়াবী খেলায়
সত্যি মিথ্যে
কে রং-জলে মিলিয়ে
মিশিয়ে দেয়
তার আকাশের
ক্যানভাসে, অনেকটা শীতের কুয়াশার মত!
ঝাপসা কুয়াশার
পিছনেও একটা
সুন্দর ছবি
থাকে আর
সেটাই শীতের
সৌন্দর্য্য ! পাতাঝরার মরশুমেই লুকিয়ে থাকে
কিশলয়ের স্বপ্ন...
রবি ঠাকুর তার
সহজ পাঠে
শীত কে
ভালোবেসে আপন
করে নেন
নি, কিন্তু
আমার শীত
বেশ ভালই
লাগে তাই
আমি আনন্দে
গুনগুন করে
গাইতেই পারি
...
"টুপ টুপ
টুপ ঘাসের
আগায়, শিশির
গুলো চুপ
চুপ চুপ চুপ কুয়াশা আঁকছে, ভোরের বেলার রূপ
শীত শীত শীত ঠান্ডা হাওয়া, চাঁদর মোড়া রাতি
রাত জাগা সব তারা গুলো, জ্বালিয়ে দে তোর বাতি" ...
চুপ চুপ চুপ কুয়াশা আঁকছে, ভোরের বেলার রূপ
শীত শীত শীত ঠান্ডা হাওয়া, চাঁদর মোড়া রাতি
রাত জাগা সব তারা গুলো, জ্বালিয়ে দে তোর বাতি" ...
সেই হালকা ঠান্ডা হাওয়াটা আবার নাচানাচি করে উঠলো, দূর
থেকে ট্রেনের
একটা শব্দ
ভেসে আসছে,
রিক্সায়ালার ক্লান্ত চোখ বেয়ে, চায়ের
দোকানের নিভে
যাওয়া উনুনের
মধ্যে দিয়ে
গভীর রাত
নামছে এই
শহরে, আর
আমার চোখে
নামছে ঘুম
...
No comments:
Post a Comment